আজকের পোস্টে আমরা গায়রে মাহরাম কি এবং কারা। পুরুষের বা ছেয়েদের জন্য গায়রে মাহরাম কারা এবং নারী মহিলা বা মেয়েদের জন্য গায়রে মাহরাম কারা সেই ব্যাপারে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্!
গায়রে মাহরাম কি?
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দা করে সামনে যাবে।
গায়রে মাহরাম বলতে কি বুঝায়?
তা আমরা অনেকেই জানি না। ভালভাবে বুঝুন, যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা বলা, দুষ্টামি মজা রসিকতা করা ইসলামি শারিয়্যাহতে জায়েজ নয় হারাম এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী ইসলামিক ভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে সামনে যেতে হবে এবং নম্র কোমল কন্ঠে / ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা যাবে না।
গায়রে মাহরাম কারা?
নারী পুরুষের জন্য যারা মাহরাম তাদের বাদে সমস্ত বিশ্বে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম।
জানেন কি গায়রে মাহরাম কারা? গায়রে মাহরাম বলতে কি বুঝায় তা আমরা অনেকেই জানি না। সহজ ভাষায় মাহরাম পুরুষ বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সবাই গায়রে মাহরাম। নিজ পরিবারে চাচাত/খালাত/মামাত/ফুপাত ভাই, দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, (আপন,দাদা ও নানা শ্বশুর বাদে) সমস্ত চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু ও ফুপা শ্বশুর, নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম।
তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা। মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে।
ভাবছেন, এরা তো আপনার ফ্যামিলি, আপনার নিকটাত্মীয়, এদের সামনে যাওয়া কেন নিষেধ হবে? নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যা জানেন, অবশ্যই আপনি তা জানেন না।
ইসলামের এই বিধান শুধুমাত্র আখিরাতের নাজাতেরই উপায় নয় বরং আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্তি এবং পবিত্রতারও রক্ষাকবচ।
মহিলাদের বা মেয়েদের জন্য গায়রে মাহরাম কারা?
নিজ পরিবারে চাচাত/খালাত/মামাত/ফুপাত সব ভাই, নিজ দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, (আপন,দাদা ও নানা শ্বশুর বাদে) সমস্ত চাচা মামা-খালু-ফুপা শ্বশুর নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম! মোট কথা মাহরাম বাদে সমস্ত বিশ্বে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম। তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা। মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবেই।
পুরুষের জন্য গায়রে মাহারাম কারা?
ভাবছেন মাহরাম/গায়রে মাহরাম কি শুধু মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য , পুরুষরা স্বাধীন? না, মোটেও তা নয়। পুরুষের জন্যও মাহরাম/গায়রে মাহরাম বিধান প্রযোজ্য।
পুরুষদের জন্যও মাহরাম নারী ১৪ জন। তারা হল-
মায়ের মত ৫ জনঃ মা, খালা, ফুফু, শাশুড়ি, দুধ-মা।
বোনের মত ৫ জনঃ বোন, দাদি, নানি, নাতনি, দুধ-বোন।
মেয়ের মত ৪ জনঃ মেয়ে, ভাই-এর মেয়ে, বোনের মেয়ে, ছেলের বউ।
এই ১৪ জন ছাড়া বাকি সবাই পুরুষের জন্য গায়রে মাহরাম। তাদের সাথে অবশ্যই পর্দা করতে হবে। পর্দার সাথে কোন আপোষ চলে না, কোন যুক্তি চলে না। সকল যুক্তির উর্ধ্বে গিয়ে পর্দা করাই হল ঈমানের দাবি।
গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলা
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,
আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন, আমার প্রশ্নটি হচ্ছেঃ
কুদৃষ্টি বা কুনজর ব্যতিত, প্রয়োজনীয় কথা বলার সময় গায়রে মাহরামদের শুধুমাত্র চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করা কি জায়েজ? রক্ত সম্পর্কীয় গায়রে মাহরামদের (মামাতো-খালাতো, ফুফাতো-চাচাতো বোন) সাথে রাস্তায় দেখা হলে কিরূপ আচরণ করবো? ঘরে বা কোনো আত্নীয়র বাসায় দেখা হলে কুশল বিনিময়ের হুকুম কি? আশা করি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ! ইবনে আবদুল্লাহ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গায়রে মাহরাম নারীদের চেহারার দিকে তাকানো জায়েজ নয়। আসলে মানুষের মূল সৌন্দর্য চেহারার মাঝেই নিহিত থাকে। যদি চেহারার দিকে তাকানোর হুকুমই থাকে, তাহলে আর পর্দার মৌলিকত্ব কিছুই বাকি থাকে না।
আত্মীয়তা রক্ষাও আবশ্যক। সেই হিসেবে আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা হলে যদিও তারা গায়রে মাহরাম হয়, তাহলেও তাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলবে। যেমন কেমন আছে? পরিবারের অন্য সদস্যারা কেমন আছে? ইত্যাদি।
ফিতনার আশংকা থাকলে প্রয়োজনীয় কথা দ্রুত সংক্ষেপ করে চলে আসা কর্তব্য।
মোটকথা, একজন আত্মীয় হিসেবে যতটুকু সৌজন্যতা রক্ষা করা যায় পর্দা রক্ষা করে এবং ফিতনায় না জড়িয়ে ততটুকু করবে।
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
উক্ত সমূহে পরিস্কার ভাষায় মেয়েদের অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছে যে, ফেইসবুকে প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের বন্ধু বানানো, তাদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়।
দ্বীনী কোন বিষয় থাকলে কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সোর্সঃ ahlehaqmedia
গায়রে মাহরামের তালিকা
এখানে তালিকা দেয়ার কিছু নেই শুধু মনে রাখবেন।- মাহরাম বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম।
গায়রে মাহরামকে সালাম
গায়রে মাহরাম মহিলাকে সালাম দেয়ার হুকুম কি?
প্রশ্নকর্তা- সাইফুল্লাহ শায়েখ
যদি তার প্রতি আকৃষ্ট হবার শংকা থাকে, তাহলে সালাম দেয়া জায়েজ নেই। যদি আশংকা না থাকে, তাহলে জায়েজ আছে।
قال ابن عابدين رحمه الله تعالى:
رَدُّ السَّلَامِ وَاجِبٌ إلَّا عَلَى … مَنْ فِي الصَّلَاةِ أَوْ بِأَكْلٍ شُغِلَا
أَوْ شُرْبٍ أَوْ قِرَاءَةٍ أَوْ أَدْعِيَهْ … أَوْ ذِكْرٍ أَوْ فِي خُطْبَةٍ أَوْ تَلْبِيَهْ
أَوْ فِي قَضَاءِ حَاجَةِ الْإِنْسَانِ … أَوْ فِي إقَامَةٍ أَوْ الْآذَانِ
أَوْ سَلَّمَ الطِّفْلُ أَوْ السَّكْرَانُ … أَوْ شَابَّةٌ يُخْشَى بِهَا افْتِتَانٌ
أَوْ فَاسِقٌ أَوْ نَاعِسٌ أَوْ نَائِمٌ … أَوْ حَالَةَ الْجِمَاعِ أَوْ تَحَاكُمٍ
أَوْ كَانَ فِي الْحَمَّامِ أَوْ مَجْنُونًا … فَوَاحِدٌ مِنْ بَعْدِهَا عِشْرُونَا.
(رد المحتار، كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها، مطلب المواضع التى لا يجب فيها رد السلام-1/618)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনেঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সোর্সঃ ahlehaqmedia
আরো পড়ুন,
রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ