আজকের পোস্টে আমরা ফিদিয়া কাকে দেওয়া যাবে, ফিদিয়া দেওয়ার নিয়ম, ফিদিয়ার বিধান, ফিদিয়ার পরিমাণ, রোজার ফিদিয়া, নামাযের ফিদিয়া ইত্যাদি দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্। পোস্ট টি রেফারেনস সহ করা তাই আপনি কিছু ভুল মনে হলে যাচাই করে নেবেন।
ফিদিয়া কি বা ফিদিয়া কাকে বলে?
ফিদিয়া বা এটা ফিদ্যা নামেও পরিচিত।ফিদিয়া হল অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য অর্থ বা খাবার সমন্বিত একটি ধর্মীয় অনুদান। যখন কেউ অসুস্থ বা বেশি বয়স্ক (বৃদ্ধ বা অল্প বয়স্ক) হয়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক দিনের জন্য রোজা বা উপবাস করতে পারে না এবং রোজা বা উপবাস রাখতে সক্ষম হন না তখন ফিদিয়া দেওয়া হয়।
ফিদিয়া অর্থ কি
[ফিদিয়া](বিশেষ্য) কোরবান; বন্দীর উদ্ধার মূল্য। (আরবি) ফিদিয়াহ্]
ফিদিয়া কখন ও কি পরিমান দিতে হবে?
চিরস্থায়ী রোগী যেমন-ক্যান্সারের রোগ, কিডনীর রোগ বা এ ধরণের স্থায়ী রোগ (যা অসহনীয়) যা থেকে রোগী সুস্থতা আশা করে না, সে রোগী রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে ফিদিয়া দিবে অর্থাৎ একজন মিসকীন খাওয়াবে।
বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী, যারা সিয়াম পালনে সক্ষম নয়, তারাও সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়া্বে।
কুরআন থেকে এর দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে ) অক্ষম, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়ায়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]
শাইখ ইবনু বাযকে একজন অতি বৃদ্ধা নারী বা পুরুষ বা চিরস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগী,সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল যিনি সাওম পালনে সক্ষম নন, তিনি কী করবেন?
তিনি উত্তরে বলেন: “তাকে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে আধা সা‘ খাবার খাওয়াতে হবে, তা সে দেশের খাদ্য দ্রব্য থেকে যেমন- খেজুর বা চাল বা এছাড়া অন্যান্য প্রধান খাবার থেকে।
আধা সা‘ ওজন হিসেবে এর পরিমাণ হল প্রায় দেড় (১.৫) কিলোগ্রাম।
যেমন- নবীর একদল সাহাবী ফাত্ওয়া দিয়েছেন, যাঁদের মাঝে ইবনু ‘আব্বাসও (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) আছেন। আর যদি তিনি (অতি বৃদ্ধা নারী) দরিদ্র হন অর্থাৎ খাওয়াতে সক্ষম না হন, তবে তার উপর কিছু বর্তায় না, আর এই কাফফারাহ একজন (মিসকীন)-কে বা অনেকজনকে (মিসকীনদের) দেওয়া যেতে পারে মাসের শুরুতে বা এর মাঝে বা এর শেষে।
আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।”
[মাজমূ‘ ফাত্ওয়া ইবন বায (১৫/২০৩)]
নামাযের ফিদিয়া!
যদি কোন ব্যক্তি নামাযের কাযা আদায় না করেই মুমূর্ষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। কিংবা মারা যায়, তাহলে তার ইতোপূর্বের কাযা নামাযের ফিদিয়া দেয়ার বিধান আপতিত হয়।
প্রতিদিনকার কাযা করা বিতরসহ ছয় ওয়াক্ত নামায হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতির এর টাকা পরিমাণ হয়। {ফতাওয়া শামী-২/৭২}
সহজ কথায়, প্রতিটি নামাযের জন্য সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা গরীবকে দান করে দিতে হবে।
(وَلَوْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صَلَوَاتٌ فَائِتَةٌ وَأَوْصَى بِالْكَفَّارَةِ يُعْطَى لِكُلِّ صَلَاةٍ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ بُرٍّ) كَالْفِطْرَةِ (وَكَذَا حُكْمُ الْوِتْرِ) وَالصَّوْمِ، وَإِنَّمَا يُعْطِي (مِنْ ثُلُثِ مَالِهِ) (الدر المختار-2/72
রোযার ফিদিয়া!
যদি কাযা করা রোযা রাখা সুযোগ আর বাকি না থাকে এমন অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, বা মারা যায়, তাহলে তার রোযার ফিদিয়া দেবার বিধান আপতিত হয়।
এক্ষেত্রে প্রতি রোযার জন্য গরীবকে দুই বেলা খানা খাওয়াতে হবে। বা এর সমমূল্য দান করতে হবে। যার পরিমাণও সদকায়ে ফিতির পরিমাণ।
أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [[٢:١٨٤]
গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। [সূরা বাকারা-১৮৩-১৮৪]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
ফিদিয়া এক বা একাধিক জনকে দেয়া যাবে কি?
একজনকেও দেয়া যায়, বা একাধিক ব্যক্তিকেও দেয়া যাবে। তবে একজনকে এক রোযার ফিদিয়ার মূল্য থেকে কম দেয়া যাবে না। বরং এক ফিদিয়ার পূর্ণ দিতে হবে।
উদাহরণতঃ
প্রতি রোযার ফিদিয়া যদি হয়, ৬৫ টাকা। তাহলে একজনকে কমপক্ষে ৬৫ টাকা দিতে হবে। এর চেয়ে কম দেয়া যাবে না।
يُعْطَى لِكُلِّ صَلَاةٍ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ بُرٍّ) كَالْفِطْرَةِ (وَكَذَا حُكْمُ الْوِتْرِ) وَالصَّوْمِ، (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الصلاة، باب قضاء الفوائت، مطلب فى اسقاط الصلاة عن الميت-2/532-533، الفتاوى الهندية-1/125)
وَلَوْ أَدَّى لِلْفَقِيرِ أَقَلَّ مِنْ نِصْفِ صَاعٍ لَمْ يَجُزْ؛ وَلَوْ أَعْطَاهُ الْكُلَّ جَازَ، (الدر المختار مع رد المحتار، باب قضاء الفوائت، مطلب بطلان الوصية بالختمات-2/535)
وفى الهندية: ولو اعطاه الكل جاز، (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى قضاء الفوائت-1/125)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
কাযা নামাযের ফিদিয়া
কারো অনেক নামায কাযা হয়ে গেলে জীবিত থাকাকালে ফিদিয়া দিলে হবে না। যেকোনোভাবেই হোক আদায় করতে হবে। তবে কেউ যদি কোনো ওজরের ( নিজের বানানো ওজর না, শরীয়তকর্তৃক স্বীকৃত)
কারণে আদায় করতে না পারে কিংবা সুযোগ না পায় তাহলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাবে। তার ওয়ারিসদের উপর তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে ফিদিয়া দেওয়া ওয়াজিব হবে।
বিতিরসহ একদিনের মোট ছয়টি নামাজের ফিদিয়া দিতে হবে। প্রতি নামাজের ফিদিয়ার পরিমাণ এক কেজি পাঁচশত পচাত্তর গ্রাম (১ কেজি ৫৭৫ গ্রাম) গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য।
যদি সে অসিয়ত না করে কিংবা ফিদিয়া দেওয়ার মতো কোনো সম্পদ তার না থাকে তাহলে তার পক্ষ থেকে ফিদিয়া দেওয়া ওয়ারিসদের উপর ওয়াজিব হবে না। তবুও তারা যদি নিজ থেকে দিয়ে দেয়, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মাফ করবেন।
————————————————————————–
দলিল: ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৪৫৯, ফাতাওয়া শামী, যাকারিয়া : ২/৫৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া , যাকারিয়া : ২/৪৫৮
আরো পড়ুন,
রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ