মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে খাওয়ার বিধান

মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে খাওয়ার বিধান সম্পর্কে আজকের পোস্ট।

প্রশ্নঃ মৃতের বাড়ীতে কুরআন খানী অনুষ্ঠান করার বিধান কি?

উত্তরঃ নিঃসন্দেহে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোরানখানী মাহফিল করা একটি বিদআত। কেননা ইহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিত ছিল না। কুরআন দ্বারা দুঃখ-চিন্তা হালকা হয়- যদি কোন ব্যক্তি উহা নীচু স্বরে তেলাওয়াত করে থাকে। জোরে চিৎকার করে বা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠ করলে এরূপ হয় না।

কেননা উচ্চস্বরে পাঠ করলে সমস্ত মানুষ তা শুনে থাকে এমনকি খেলা-ধুলায় লিপ্ত লোকদের কানেও তা পৌঁছে কিন্তু তারা তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না।এমনকি আপনি দেখবেন যারা গান-বাদ্য শুনে তাদের কাছেও ঐ কুরআনের আওয়াজ পৌঁছে। তারা গানও শুনছে কুরআনও শুনছে। ফলে তারা যেন এই কুরআনকে ঠাট্টা ও তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত করেছে। কুরআনের অবমাননা করছে।

আর শোক-সমবেদনা জানাতে ও আগত লোকদের স্বাগত জানানোর জন্য মৃতের পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া একটি বিদআত। অনুরূপভাবে মৃতের বাড়ীতে ভোজের আয়োজন করাও একটি বিদআত। কেননা বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে পরিচিত ছিল না। তবে চলতে ফিরতে, মসজিদে বাজারে মৃতের পরিবারকে শোক জানানোতে কোন অসুবিধা নেই।

মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে সমবেত লোকদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করাকে ছাহাবায়ে কেরাম নিষিদ্ধ নিয়াহা বা ‘মৃতের জন্য বিলাপ’ এর অন্তর্ভূক্ত বলেছেন। আর মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকে লা‘নত করেছেন।

তিনি বলেন,

ﺍﻟﻨَّﺎﺋِﺤَﺔُ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻢْ ﺗَﺘُﺐْ ﻗَﺒْﻞَ ﻣَﻮْﺗِﻬَﺎ ﺗُﻘَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺳِﺮْﺑَﺎﻝٌ ﻣِﻦْ ﻗَﻄِﺮَﺍﻥٍ ﻭَﺩِﺭْﻉٌ ﻣِﻦْ ﺟَﺮَﺏٍ

“উচ্চস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামত দিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানো হবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।” (আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)

মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত, তারা যেন এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়। কেননা বিদআত পরিত্যাগে তাদের যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃত ব্যক্তির।

কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖَ ﻳُﻌَﺬَّﺏُ ﺑِﺒُﻜَﺎﺀِ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ

“নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে।”

এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’ একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এই ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকে দেয়া হবে না।

কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,

ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٌ ﻭِﺯْﺭَ ﺃُﺧْﺮَﻯ

“একজন অন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪)

আর শাস্তি মানেই দন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “সফর শাস্তির একটি অংশ।” অথচ এখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্ট প্রভৃতি।

সারকথা মুসলিম ভাইদেরকে আমি নসীহত করি, তারা যেন শরীয়ত বহির্ভূত এই কুসংস্কার পরিত্যাগ করে যা তাদেরকে আল্লাহ্ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে এবং মৃতদের শাস্তি বৃদ্ধি করবে।

উৎস : ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, নামায অধ্যায়

মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)

অনুবাদ : মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহিল হাদী

আরো পড়ুন,

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব

রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ

রমজানের মাসআলা সমূহ

রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

রমজানের সময় সূচি 2022

ইফতারের দোয়া এবং নিয়ত

রোজার নিয়ত

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

ইসলাম
ইসলাম

Leave a Reply

8 − 3 =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.