মেয়েদের চুল কাটার হাদিস | মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান | জায়েজ কিনা ইসলাম কি বলে ইত্যাদি বিষয় নিয়েই আজকের আলোচনা।
মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান কি? বা মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই এমন অনেক কিছু লিখেই অনেকে ইন্টারনেটে খুঁজে বা বিভিন্নজনকে প্রশ্ন করেন। তাই তাদের জন্যই আমাদের আজকের মেয়েদের চুল কাটার বিধান নিয়ে পোস্টটি।
মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান | মেয়েদের চুল কাটা সম্পর্কে ইসলাম
নিম্নোক্ত অবস্থায় মহিলাদের বা মেয়েদের মাথার চুল কাটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
যথা:
- যদি কাফের-ফাসেক নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয়।
- যদি এমন স্টাইলে চুল কাটা হয় যা অবিকল পুরুষদের মত বুঝা যায়।
- যদি পর পুরুষের মাধ্যমে চুল কাটা হয় (যেমনটি বর্তমান যুগে কিছু কিছু সেলুনে ঘটে থাকে।)
- যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া হয়।
তাহলে তা হারাম। হারাম হওয়ার কারণও স্পষ্ট। মেয়েদের চুল কাটার হাদিস
কিন্তু যদি স্বামীর সামনে নিজের চুলের সৌন্দর্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয় বা লম্বা চুলের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে হয় বা এ জাতীয় গ্রহনযোগ্য উদ্দেশ্যে হয় তাহলে সঠিক মতানুযায়ী চুল ছোট করা জায়েয আছে। এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে,
كَانَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذْنَ مِنْ رُءُوسِهِنَّ حَتَّى تَكُونَ كَالْوَفْرَةِ ) رواه مسلم (320) .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীগণ এমনভাবে তাদের মাথার চুল কাটতেন যে, তা কাঁধ থেকে একটু নিচে যেত বা কান বরাবর হত।” (সহীহ মুসলিম, হা/৩২০)
ইমাম নওবী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:
” فيه دليل على جواز تخفيف الشعور للنساء ” انتهى. ” شرح مسلم ” (4/5)
“এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।” (শরহে মুসলিম ৫/৪)
মেয়েদের চুল কাটা সম্পর্কে আল্লামা উসাইমীন রাহ, বলেন:
এই মূহুর্তে আমার এমন কোন দলীল জানা নাই যা দ্বারা নারীদের চুল কাটা হারাম প্রমাণিত হয়। হারাম বলার মত দূর্বল; এর কোন যৌক্তিকতা নেই। মাকরূহ বলার মতটিও প্রশ্নবিদ্ধ। আর বৈধ হওয়ার মতটিই দলীল ও মূলনীতির কাছাকাছি। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তিকালের পর তার এর স্ত্রীদের চুল কাটার হাদীস সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। (শাইখের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ)
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়লয়, সউদী আরব।
মহিলাদের চুল কাটার বিধান | ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ
নারীদের নারীসুলভ আকৃতি ও চেহারা বজায় রাখা শরীয়তে হুকুম। বিশেষ করে পুরুষের সাদৃশ্যগ্রহণ হারাম। নারী পুরুষ কেও পরস্পরের আকৃতি প্রকৃতি চেহারা ও পোষাক ধারণ করলে তাদের ওপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হয়।
সুতরাং কোনো দুর্ঘটনা, রোগব্যাধি বা শরীয়তসম্মত যৌক্তিক কারণ ছাড়া নারীরা মাথার কোনো অংশের চুলই কাটতে পারবে না। শুধুমাত্র হজ্জ ও ওমরা শেষে হাতের আঙ্গুলের এক দাগ পরিমাণ চুলের গোছা কাটা তখনকার সাময়িক বিধান। এছাড়া সাধারণত নারীদের চুল যেমন আছে তেমন রাখতে হবে।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী
সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ।
মেয়েদের চুল কাটা নিয়ে হাদিস । মহিলাদের চুল কাটা সম্পর্কে হাদিস
মেয়েদের চুল কাটা জায়েজ কিনা এই ব্যাপারে সরাসরি কোনো কুরআনের আয়াত কিংবা হাদীস নেই।অধিকাংশ উলামার মত অনুযায়ী মেয়েদের জন্য চুল কাটা জায়েজ হবে তবে কিছু শর্ত রয়েছে।
প্রথমত, চুল কাটার উদ্দেশ্য কি সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়। চুল কাটার উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে যে রাস্তায় বের হলে মানুষরা, বিশেষত ছেলেরা দেখে আপনাকে সুন্দর বলবে, আপনার দিক থেকে নজরই ফিরাতে পারবে না ইত্যাদি। তাহলে আপনার জন্য চুল কাটা হারাম। কেননা নারীদেরকে অবশ্যই পরপুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে। অর্থাৎ চুল ঢাকতে হবে এবং নারীদের সৌন্দর্য কেবল মাত্র তাদের সৌলমেট অর্থাৎ হাসবেন্ডকেই দেখানো জায়েজ।
যদি আপনার চুল কাটার কারণ হয় আপনার হাসবেন্ডকে খুশি করা তাহলে এটা বরং আপনার সওয়াবের খাতায় লেখা হবে ইন শা আল্লাহ।
দ্বিতীয়ত, চুলের স্টাইলে কোনো মতেই কুফফারদের অনুকরণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা রসুলুল্লাহ(সা) কাফিরদেরকে অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহুল বুখরী-৭০৭৯,৩৪৫৬]
এবং এটা কিয়ামাতের একটা আলামাত যে মুসলিমরা কাফিরদেরকে অনুকরণ করবে। [সহীহুল বুখরী-৩৪৫৬] বলাই বাহুল্য আজকাল যত হেয়ারকাটের নাম শোনা যায় সবই সম্ভবত কাফিরদের উদ্ভাবন। ইউ কাট, লেয়ার, ভলিউম লেয়ার, টুইটি, ব্যাং ইত্যাদি ফিত্যাদি।
তৃতীয়ত, নারীরা ততোটুকু পর্যন্ত চুল কাটতে পারবে যতোটুকু পর্যন্ত কাটলে তা পুরুষদেরকে নকল করা হবে না। অর্থাৎ চুল কাটলে তা অবশ্যই ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত রাখতে হবে।কেননা ঘাড়ের উপরে আসলেই তা পুরুষদেরকে নকল করা হবে। আল্লাহর রসুল(সা) সেই নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন যারা পুরুষদের নকল করে। [জামি আত-তিরমিযি-৩০১৩,সুনান আবি দাউদ-৪০৯৭]
সর্বোপরি, আল্লাহু আ’লাম।আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
লেখক: মুহাম্মদ মশিউর রহমান
মেয়েদের চুল কাটার সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
হযরত ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাঃ ওই পুরুষদের লানত করেছেন, যারা মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। এবং ওই মহিলাদের লানত করেছেন, যারা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে৷ এবং তিনি আরও বলেন, তাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও।
(ছহীহ বুখারী: হাদীস নং ৫৮৮৫)
অন্য হাদীসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা, বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ওই পুরুষদের লানত করেছেন, যারা নারীদের ন্যায় পোষাক পরে এবং ওই নারীদের লানত করেছেন, যারা পুরুষদের ন্যায় পোষাক পরে।
(সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং ৪০৯৮, আল মাজমূ লিল নববী ৪/৪৬৯ )
সামনে দিয়ে ছোট করে কাটা সেটাও হারাম। কেননা, চুল ছোট বড় করে কাটার ব্যপারে হাদীসে আছে, ইবনে উমার রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বাযা’ থেকে নিষেধ করেছেন। (এই হাদীসের রাবী) নাফে’ রাহ,কে জিজ্ঞেস করা হলো, ক্বাযা’ কী? তখন তিনি বললেন: মাথার চুলের কিছু অংশ মুণ্ডিয়ে ফেলা আর কিছু অংশ রেখে দেওয়া৷
(ছহীহ বুখারী বুখারী: ৫৯২১, ছহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং ২১২০)
নারিদের চুল কাটা সম্পর্কে ইসলাম । মহিলাদের চুল কাটার হাদিস।
আরো একটা কারন আছে, মহিলাদের এভাবে চুল কাটা কুফফার তথা বিজাতীয় সংস্কৃতির অংশ। কোনো মুসলমানের জন্যে বিজাতীয় সংস্কৃতি ধারণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
হাদীসে আছে,হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
(সুনানে আবূ দাউদ: হাদীস নং ৩৫১২)
মেয়েদের চুল কাটার হাদিস
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা হাছকফী রহঃ বলেন,হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
(সুনানে আবূ দাউদ: হাদীস নং ৩৫১২)
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা হাছকফী রহঃ বলেন,, যে মেয়ে তার মাথার চুল কাটল, সে গোনাহগার এবং অভিশাপপ্রাপ্ত হলো। যদিও স্বামীর অনুমতি নিয়ে কাটুক না কেন। কেননা, স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টির অনুসরণ জায়েয নেই৷
(আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৪০৭)
মেয়েদের চুল কাটা নিয়ে কিছু প্রশ্নত্তর
মেয়েদের চুল কাটা কি হারাম?
মেয়েদের চুল কাটা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন এটি মাকরুহ, আবার কেউ এটিকে হারাম বলেছেন।
মেয়েদের চুল কাটা কি জায়েজ?
যদি স্বামীর সামনে নিজের চুলের সৌন্দর্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয় বা লম্বা চুলের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে হয় বা এ জাতীয় গ্রহণযোগ্য উদ্দেশ্যে হয়— তাহলে সঠিক মত অনুযায়ী চুল ছোট করা জায়েজ আছে।
এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীগণ এমনভাবে তাদের মাথার চুল কাটতেন যে, তা কাঁধ থেকে একটু নিচে যেত বা কান বরাবর হতো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২০)
ইমাম নববি (রহ.) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।” (শরহে মুসলিম : ৫/৪)
মেয়েদের চুল কাটা জায়েজ কিনা?
প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়েদের জন্যে মাথার চুল এমনভাবে কাটা যা দেখতে পুরুষের মতো বা তার কাছাকাছি মনে হয়; জায়েয নয়।
মেয়েদের চুল কাটা কি গুনাহ?
প্রথমত, এই চুল কাটার কারণে মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায় মনে হয়। আর মহিলাদের পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ নাজায়েয এবং হারাম।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, নারীদের জন্য সামনে দিয়ে ছোট করে চুল কাটা জায়েয নাই। যেহেতু মেয়েদের মাথার সামনের অংশের চুল কাটার উপরের হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আছে। তাছাড়া সামনের চুল কাটা পুরুষের সঙ্গেও সাদৃশ্য রাখার শামিল। যে সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞার হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে৷ তাই মাথার সামনের অংশের চুল কাটা জায়েয হবে না। আর পিছনে চুল কেটে ছোট করা সেটাও জায়েয নাই। তবে তারা চুলের মাথা সমান করার জন্য চুলের মাথায় সাধারন একটু কাটতে পারবে।আর যদি কোন জটিল রোগ হয় তবে চুল কাটা জায়েয।
সর্বোপরি, আল্লাহু আ’লাম।আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
আরো পড়ুন,
রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ