মেয়েদের পর্দার বয়স কত? বা ইসলামে মেয়েদের পর্দার বয়স সম্পর্কে কি বলা আছে তা নিয়েই আমাদের আজকের এই পোস্ট। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পর্দা করার তাওফিক দিন।
মেয়েদের পর্দার বয়স কত?
অনেকে মনে করে হায়েজ না দেখা দেয়া পর্যন্ত পর্দার বয়স হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। মেয়েরা বড় হয়ে ওঠলেই পর্দার বয়স শুরু হয়ে যায় ।
ফাতাওয়ায়ে শামীসহ অন্যান্য ফাতাওয়া গ্রন্থে নয় বছর অতিক্রম করলেই পর্দার বয়স হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই এই বয়স থেকেই পর্দা করা জরুরী।
বিশেষ করে যদি তাদের দেখতে বড় লাগে তো পর্দা করানোই লাগবে। বিশেষ করে ৮/৯ বছরের পর হতে মেয়েরা ফিজিক্যাল হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হয় বেশি।
তাই তাদের সেফটির জন্যে হলেও তাদের আগে থেকেই বোরকা পড়ানো। পর্দা করানো উচিত।
আর হায়েজ হবার পর থেকে পর্দা করা পুরোপুরি ফরজ। (ফাতাওয়ায়ে শামী:১/৪০৮;৩.৩৭ আহসানুল ফাতাওয়া :৮/৩৮)
ইসলামে পর্দা সম্পর্কে সকল পোস্ট পড়ুন
পালক সন্তানের সাথে মেয়েদের পর্দা করা
পালক সন্তান আপন সন্তানের মতো নয়। বাবার জন্য বালেগ হলে পালিত কন্যা এবং মায়ের জন্য বালেগ হলে পালিত পুত্র সাথে পর্দা করা ফরজ হয়ে যাবে।
হ্যাঁ, সন্তানের দুই বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে যদি নিজের বুকের দুধ খাওয়ায় সেক্ষেত্রে সন্তানও হয়ে যায়। আর দুধ সন্তানের সাথে দেখা দেওয়া জায়েয ।
দুধ পান না করিয়ে থাকলে বালেগ হবার পর পালক সন্তানের সাথে দেখা দেয়া জায়েয হবে না। পালক সন্তান নিজের সন্তানের মতো নয় তা সূরা আহযাবের ৪ও৫ নং আয়াতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে।
মেয়েদের সাথে মেয়েদের পর্দা
অন্য নারীর সামনে একজন নারীর সতর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত । এ অংশ কোন বিশেষ ওযর ছাড়া কোন নারীর সামনেও খোলা জায়েয নয়। আর পেট, পিঠ, বুক এগুলোও প্রয়োজন ছাড়া অন্য নারীর সামনে অনাবৃত করা অনুচিত। আর ফিতনার আশংকা হলে তা আবৃত রাখা জরুরী।
( আল মুফাসসাল: ৩/২৬৫; ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৭১)
বিধর্মী নারীর সাথে মুসলিম নারীর_পর্দা
বিধর্মী নারীর সামনে মুখ, হাত ও পা ছাড়া পুরো শরীর এমনকি চুলও ঢেকে রাখা জরুরী। তাদের সামনে শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করা গুনাহ। (ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/৩৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৪/১৯৬)
বেগানা পুরুষদেরপ্রতি দৃষ্টিপাত করা
এ প্রসঙ্গে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত স্মরনীয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, অর্থ-‘হে নবী! আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনত রাখে।’অর্থাৎ পর পুরুষের দিকে না তাকায়।
হযরত উম্মে সালমা রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ছিলাম, হযরত মায়মুনা রা. ও ছিলেন। ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম এলেন। এটা ছিল হেজাবের হুকুম নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন.
‘তোমরা দু’জন তার থেকে পর্দা কর। আমরা বললাম, সে তো অন্ধ। আমাদেরকে দেখছে না এবং আমাদেরকে চিনেও না। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না?
(সুনানে আবূ দাঊদ হাদীস ৪১১২)
উক্ত আয়াতও হাদীসের আলোকে ফকীহগণ বলেন, কুনজরে পুরুষের দিকে তাকানো মহিলাদের জন্য নাজায়েয। তদ্রপ আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এমন গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করাও নিষেধ।
আর কোন ধরনের ফিতনার আশংকা না হলে সাধারণ দৃষ্টিতে পর পুরুষের দিকে তাকানো নাজায়েয নয়। তবে এক্ষেত্রে না তাকানোই ভালো।
সুতরাং ভিডিও লেকচার দেখা হতে নারীর বিরত থাকা উচিত। কারন এভাবে গাইরে মাহরাম পুরুষদের দেখা ফেত্নামুক্ত না।
দ্বীন শিখার জন্য দ্বীনি কিতাব পড়া উচিত। (ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৭১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২২৭; আল মুফাসসাল: ৩/২২৭; জামেউ আহকামিন নিসা: ৪/২৮৩)
(সংগ্রহীত)
কত বছর বয়সে পর্দা করা ফরজ?
ইসলামে পর্দা মেয়েদের জন্য একটা ফরয বিধান । একটা মেয়ে যখন বালেগা হয় তখন তার জন্য পর্দা ফরয হয় । এখানে বালেগা বলতে একটা মেয়ের হায়েজ বা (period) শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছে ।
প্রাপ্ত বয়স্কা হলে তাদের উপর পর্দা ফরয হয় (নূর ৫৯; ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, পৃঃ ২৬৫)।
এই সময়। কেবল মাহরাম পুরুষদের সামনে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে সূরা নূর ৩১ আয়াতে ১০ জন পুরুষের কথা বলা হয়েছে, যাদের সাথে নারী সাধারণ পোষাকে সাক্ষাৎ করতে পারে। যেমন স্বামী, পিতা (দাদা-নানা, চাচা-মামা), শ্বশুর (জামাতা), পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা (বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয়), ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগিনীপুত্র, কামনাহীন পুরুষ এবং নারী-অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ শিশু’। এতদ্ব্যতীত দুগ্ধসম্পর্কীয় ভাই ও অন্যান্যগণ রক্তসম্পর্কীয় ভাই ও অন্যান্যগণের ন্যায় (বুখারী হা/২৬৪৫, ৫১০৩)।
তবে সকলে হারাম হ’লেও তাদের সাথে ব্যবহারে তারতম্য থাকবে। যেমন স্বামী, পিতা, পুত্র, ভ্রাতা এবং অন্যান্যগণ সমান নয়।
যাদের সাথে দেখা করা জায়েয তাদের মাহরাম বলা হয় । আর বাকিদের নন মাহরাম , মেয়েরা মাহরামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না । নন মাহরামের মদ্ধে কেও তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মাহরাম হতে পারেন ।
আরো পড়ুন,
রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ