রমজান মাসে তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে? জেনে নিন-
তারাবি না পড়লেও রোজা হবে। কারণ তারাবি সুন্নাত। মূলত তারাবির নামাজের সাথে রোজার কোন সম্পর্ক নেই। তারাবি না পড়লে বিশাল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবেন আর রোজা না থাকলে কঠিন পাপ হবে।
রমজান মাসে তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে?
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এটা নিয়ে অনেকেরই কিছু কমন বা, সাধারণ জিজ্ঞাসা থাকে। তবে এক্ষেত্রে একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে একটা কথা মনে না রাখলেই নয়! আর সেটা হলোঃ
জানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা খারাপ কিছু না। কিন্তু ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করা কখনোই উচিৎ নয়। আর তাই মাহে রমজানে তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল সেটা কেবল জানার জন্যই প্রশ্ন করুন। কোন ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টির জন্য কখনোই না!
তারাবির নামাজ সুন্নত না নফল এটা নিয়ে নিচে কিছু প্রশ্নোত্তর দেয়া হলো।
প্রশ্নঃ তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে না?
উত্তর: তারাবির নামাজ রোজার মাসে না পড়লেও রোজা হবে। এবং তারাবির নামাজ কিন্তু দুইটি ভিন্ন ইবাদত। রোজা আদায় হওয়া বা, না হওয়ার সাথে তারাবির নামাজের কোন সম্পর্ক নেই! পবিত্র মাহে রমজানে তারাবির নামাজ না পড়লেও আপনার রোজা হয়ে যাবে। রমজান মাসে তারাবির সালাতের অনেক মর্যাদা এবং ফজিলত রয়েছে এটা ঠিকই। কিন্তু তাই বলে তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে না? এটা ঠিক না। তারাবির সালাত আদায় না করলেও রোজা আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ তারাবির নামাজ না পড়লেও কি রোজা হবে?
উত্তর: ফজিলতের দিক থেকে তারাবির নামাজ এবং রোজা দুইটারই মর্যাদা সমান সমান। এখন প্রশ্ন হলো ‘তারাবির নামাজ না পড়লেও কি রোজা হবে?’ এর সহজ উত্তর হলো – হ্যাঁ! অবশ্যই রোজা হয়ে যাবে যদি আপনি তারাবির নামাজ নাও পড়ে থাকেন। কিন্তু তাই বলে তারাবির নামাজ একেবারেই ছেড়ে দিলে চলবে না! রোজার মাসে তারাবির সালাত নিয়ে হাদিসে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
যেমন, মাহে রমজানে তারাবি নামাজের ফজিলত, গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেনঃ- ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব পাওয়ার আশায় মাহে রমজানের রাতে তারাবির নামাজ আদায় করে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ [বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ]
রমজানে সিয়াম পালন থেকে শুরু করে তারাবির নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই কোন ভাবেই তারাবির নামাজ ছেড়ে দেয়া উচিৎ হবে না।
প্রশ্নঃ তারাবি না পড়লে রোজা হবে কি?
উত্তর: পবিত্র রমজানে কেউ যদি তারাবির নামাজ ছেড়ে দেয়, সেক্ষেত্রে রোজার উপর এর কোন প্রভাব পড়বে না। কেননা রমাজেন সিয়াম ও সালাতুত তারাবি দুটিই ভিন্ন ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র আমল ও ইবাদত । একজন রোজাদার যদি তারাবির নামাজ নাও পড়েন সেটা রোজার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।
সুতরাং তারাবি না পড়লে রোজা হবে, সিয়াম পালন হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি তারাবির নামাজ পড়েনি কিন্তু দিনের বেলা রোজা রেখেছে, তাহলে তার রমজানের ফরজ রোজা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সুন্নাত ও তারাবির মাধ্যমে তার যে ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার সুযোগ ছিল, তা থেকে সে বঞ্চিত হবে।
তারাবির নামাজ সুন্নত না নফল? ফরজ নাকি ওয়াজিব?
তারাবির নামাজ সুন্নত না নফল? তারাবির নামাজ সুন্নত না নফল জানতে চাই । তারাবি নামাজ সুন্নত না নফল। তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল? তারাবির নামাজ সুন্নত?
আমি যেটুকু জানি, রোজা একমাত্র আল্লাহ্ জোন্যে এবং আল্লাহ্ তা-আলাই তা ভালো জানেন। তাছাড়া, রমজান মাসে তারাবির নামাজ ব্যতীত রোজার পরিপূর্ণতা পাওয়ার কথা নয় – আমি মনে করি।
আরো পড়ুন,
রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন
অনেকে তারাবির নামাজ পড়েন, কিন্তু এশার ফরজ নামাজের আগে যে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আছে, সেটা পড়েন না। এই নামাজ কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? কিংবা এটা কি তারাবির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ?
ইশার আগের চার রাকাত সুন্নত এটা “সুন্নতে গাইরে মুআক্কাদা” অর্থাৎ অতো গুরুত্বারোপ করা হয়নি। আর তারাবীর নামাজ “সুন্নতে মুআক্কাদা” তাকীদপূর্ণ সুন্নত অর্থাৎ যে ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সে হিসেবে ইশার আগের সুন্নত না পড়লে গুনাহগার _পাপী_ হবেনা। আর তারাবী না পড়লে গুনাহগার হবে। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
তারাবী নামাজের গুরুত্ব কী এবং কতটুকু? রমজানে তারাবী কি আদায় করতেই হবে? এটি না আদায় করলে কোন জবাবদিহিতা আছে কি?
তারাবীর নামাজ আদায় না করলে গুনাহগার হবে না এবং এর কোন জবাবদিহিতা নেই। এই নামাজ নফল এবং ঐচ্ছিক ইবাদত। কেহ সমার্থ হইলে আদায় করুক বা না করুক। তবে আমাদের বাংলদেশে যে তারাবীর নামাজ আদায় করা হয় এর কোন গুরুত্ব নেই, ছোয়াবও নেই। কোন প্রকৃত মুসলমান এক দমে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না। নামাজের একাগ্রতা এবং আল্লাহ্র সামনে দাঁড়িয়ে এই রকম তাড়াহুড়া করে কেহ নামাজ আদায় করবে না। এক দমে সূরা ফাতিহা পাঠ করা মানে নামাজে কি পড়লাম, কাকে উদ্দেশ্য করে পড়লাম, নিজে কি বুঝলাম, নিজের অন্তরে কি অনুভূত হল?- এর কোন কিছুই হইল না। বাংলাদেশে যে তারাবীর নামাজ ইহা আল্লাহ্র সাথে বিয়াদবী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তারাবীর যে নামাজ আদায় হয়, তা বাংলাদেশের মত তাড়াহুড়া নয়।
নবী(সা) প্রথম দিন মসজিদে তারাবীর নামাজ আদায় করেন তারপর আর কখনও তারাবী মসজিদে আদায় করেন নি। নিজ ঘড়ে তারাবীর নামাজ আদায় করতেন। প্রথম খলিফা আবু বকর(রা) তারাবীর নামাজ আদায় করেন নি। দ্বিতীয় খলিফা ওমর(রা) দেখেন একেক সাহাবী মসজিদের সামনে, কেহ মসজিদের পিছনে কর্ণারে, কেহ মাঝখানে নামাজ আদায় করতে। তারপর তিনি সকলকে একত্রিত করে জামাতে আদায় করার নির্দেশ দেন। তখন থেকে তারাবীর নামাজের প্রচলন। তারাবী নামাজের জামাতে আদায় করার সুন্নত নবী(সা)-র নয়, ইহা সাহাবীদের তৈরি সুন্নত।
তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত। এর কম কি পড়া যায়?
আপনি ৮ রাকাত ও পড়তে পারেন, আপনি ২০ রাকাত ও পড়তে পারেন। দুইটাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু আছে। তবে আল্লাহকে খুশী করার চেষ্টায় এই নামাজ। কেও গুরুত্ব দেয় পরিমাণে, কেও গুরুত্ব দেয় মানে।
আপনার মন যেই জামাতকে বলে যে, এই জামাতে পরলে আমার নামাজটা বেশী মনপুত হবে, বা আপনি অনুভব করবেন যে আপনি আল্লাহের বেশী নিকতে জেতে পারছেন, আপনি সেই জামাতে পরুন, হোক ৮ বা ২০ রাকাত।
সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ আপনার মনের খবর জানেন। আর উনি আপনার মনের ডাকেই সারা দিবেন। দেখানো বা মন থেকে না আসলে সে নামাজ উনি সারা দেন না বলেই আমি মনে করি।
কেন বেতরের নামাজের ৩য় রাকাতে আবার নিয়ত বাধা হয়?
নিয়ত বাধা হয় না শুধুমাত্র আল্লাহু আকবর বলে হাত বাধা হয়।
আজকের তারাবির নামাজ কে কিভাবে আদায় করেছেন?
একজন দায়িত্বশীল মানুষের আচরণ হবে বাসায় পরিবারের সাথে বা একা আদায় করা।
আপনি বাসার ছাদে বা যেখানেই হোক অন্যদের সাথে যদি নামাজ পড়েন তারা করনা আক্রান্ত কিনা এটা আপনি জানবেন না। করনার কোন লক্ষ্মণ নাও থাকতে পারে। হতে পারে এমন লোক বাজার থেকে করনা নিয়ে এসেছেন।
এই করনা আপনি বাড়ি বয়ে নিয়ে এসে আপনার বৃদ্ধ বাবা মা এর জীবন বিপন্ন করতে পারেন। তাছাড়া আপনার চিকিৎসা পরীক্ষা যাতায়াত বাবদ আরো অনেকে আক্রান্ত হবেন। সেখান থেকে আরো অনেকে। এভাবে আপনি অনেকের জীবনের জন্য দায়ী হতে পারেন।
কে সঠিক আমি জানিনা। তবে হযরত মোহাম্মদ সা কে যতটুকু জানি তিনি হলে তার উম্মতদের কাছে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ পছন্দ করতেন না।
তারাবি নামাজের পূর্বে বিতর আদায় করা যাবে কি?
নাহ। কারণ বিতর হচ্ছে দিনের শেষ নামাজ। আপনি যদি কোনোদিন তাহাজ্জুদ পড়তে চান তাহলে সেদিন বিতর বাকি রেখে দেন কেন? কারণ হলো সেদিন আরো নামাজ পড়ার ইচ্ছা রাখেন বলে সেদিনের বিতর নামাজ রেখে দেন। তারাবীহ পড়ার শেষে বিতর আদায় করবেন। জাযাকাল্লহু খায়রান।
তারাবির নামাজ কত রাকাত? তারাবি কোন আমলে চালু হয়েছিল?
তারাবির নামাজ ৮রাকাত/ ২০ রাকাত যে যেমন খুশি পড়তে পারবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবি নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।
নবী করিম (সা.) বেশির ভাগ সময় রাতের শেষাংশে তারাবি আদায় করতেন এবং প্রথমাংশে বিশ্রাম নিতেন। তিনি কখনো আট রাকাত, কখনো ১৬ রাকাত, আবার কখনো ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু বিশেষ কারণবশত নিয়মিত ২০ রাকাত পড়তেন না। কেননা, তিনি কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়।
ফরজ নামাজ একাকী পড়ার পর পুনরায় জামাতে আবার ঐ ফরজ নামাজ পড়া যায় কি?
ফরজ নামাজ একাকী আদায় করার পর যদি জামাত সামনে আসে, তাহলে সেই জামাতের সঙ্গে পূনরায় আদায় করা যাবে। এবং এই জামাতের নামাজটা নফল হিসেবে গন্য হবে।
তবে লক্ষনীয় বিষয় হলো, রাসূল সাঃ বলেছেন, ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নফল নামাজ নেই। ( বুখারি ১১৯৭)
আর একাকী আদায় করার পর জামাতে আদায় করলে যেহেতু সেটা নফল হিসেবে গন্য হয়, তাই এই দুই ওয়াক্তের নামাজ একাকী আদায় করার পর পূনরায় জামাতে আদায় করা মাকরূহ। বাকি তিন ওয়াক্তে আদায় করা যাবে।
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া পড়া কি আবশ্যক?
জী না প্রতি চার রাকাত পর দোয়া পড়া আবশ্যক নয়। বরং প্রতি চার রাকাত পর চার রাকাত নামাজ পড়তে যে পরিমাণ সময় লেগেছে সেই পরিমাণ বিশ্রাম করা মুস্তাহাব। এই ফাঁকা সময়ের মধ্যে আপনি চাইলে যেকোনো ধরনের দোয়া, দুরুদ, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে কেউ যদি দোয়া ইত্যাদি পড়া আবশ্যক মনে করে তাহলে সেটা বেদাত হবে। হাদিসে আমাদের প্রচলিত যে দোয়াটি রয়েছে “সুবহানাজিল মুলকি”হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই। চাইলে আপনি সাধারণ দোয়া হিসেবে পড়তে পারেন(জায়েজ আছে) সুন্নত মনে করে নয়।
সূত্র: ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(ইউটিউব)
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী (আহলে হক মিডিয়া)
কোরা থেকে আর সম্পর্কিত প্রশ্ন এর উত্তর জেনে নিন-
রোজায় সুস্থ থাকার জন্য কী পরিমাণে পানি পান করা উচিত? সেহেরির সময় প্রচুর পানি পান করা কি ঠিক?
রোজা রেখে নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি?
রোজায় সুস্থ থাকার জন্য কী পরিমাণে পানি পান করা উচিত? সেহেরির সময় প্রচুর পানি পান করা কি ঠিক?
রোজা রেখে নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি?
তারাবি নামাজের পূর্বে বিতর আদায় করা যাবে কি?
রোজা রেখে উলঙ্গ হয়ে গোসল করলে কি রোজা হালকা হয়ে যাবে?
রোজা অবস্থায় চুল অথবা হাতের নখ কাটা যাবে কী?
তারাবির নামাজ ৮ রাকাত নাকি 20 রাকাত সহীহ দলীল সহ কেউ দেখাইতে পারবেন কি?