রোজার নিয়ত করা কি ফরজ
অনেকেই জানতে চান যে রোজার নিয়ত করা কি ফরজ? নাকি ওয়াজিব বা সুন্নাহ। একজন মুসলিম হিসেবে এই বিষয়টি জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্যপূর্ন। কেননা মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। তাই এই বেপারে সঠিক জ্ঞান থাকাটা আমাদের জন্য আবশ্যকীয়।
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ। এর উত্তর হলো রোজা রাখার পূর্বে রোজার নিয়ত করা ফরজ। কেউ যদি রোজা রাখার জন্য রোজার নিয়ত না করে রোজা পালন করে তাহলে তার রোযা শুদ্ধ বা সঠিক হবে না।
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি আমলের সওয়াব নিয়তের উপর নির্ভর করে প্রদান করে থাকে প্রতিটি কাজের জন্য নিয়ত সহি এবং সুন্দর হতে হয়।
নিয়ত রোজার রোকন তথা শর্ত। আর ইবাদতের সওয়াবও নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। হাদিস শরিফে আছে, ‘সকল আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ’ -সহিহ বোখারি
সাহরীর খাবার পর রোজার নিয়ত করা কি ফরজ
হ্যাঁ, সাহরীর খাবার পর রোজার নিয়ত করা ফরজ। সাহরীর খাবার পর এভাবেও রোজার নিয়ত করা যেতে পারে-
– بِصَوْمِ غَدٍا نَوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَان
উচ্চারণ : বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান।
অর্থ : আমি রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।
আরো পড়ুন,
রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ | ডাঃ জাকির নায়েক
নিয়তের ক্ষেত্রে সাধারণত আমরা দুই ধরনের ভুলের শিকার হয়ে থাকি। যেমন-
১. কেউ কেউ নিয়তের শব্দগুলো শুধু মুখে উচ্চারণ করেন; অন্তরে সংকল্প করেন না।
২. আবার অনেকে নিয়তের শব্দগুলো মুখেও উচ্চারণ করেন না; অন্তরেও কোনো কল্পনা উপস্থিত করেন না। তার মানে নিয়ত ফরজ হওয়ার কথা তিনি জানেনই না।
উপরোক্ত দুই শ্রেণির কারো রোজাই হবে না। এ সম্পর্কে আদ্দুররুল মুখতার প্রণেতার ভাষ্য হলো- ‘নিয়তের ক্ষেত্রে অন্তরের সুদৃঢ় কর্মতৎপরতা গ্রহণযোগ্য। কাজেই শুধু মুখের উচ্চারণ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদি তা অন্তরের কথার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়। কেননা, শুধু মুখের উচ্চারণকে কথা বলা হয়; নিয়ত বলা হয় না। ’ –আদ-দুররুল মুখতার: ২/৯১
রোজার নিয়ত করা ফরজ এই বিষয়ে কুরআন সুন্নাহের আলোকে ডাঃ জাকির নায়েকের গুরুত্বপূর্ণ লেকচার শুনুন-
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ | ডাঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
রোজার নিয়ত করা ফরজ এই বিষয়ে (মরহুম) ডাঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের গুরুত্বপূর্ণ লেকচার শুনুন-
নফল রোজার নিয়ত করা কি ফরজ
নিয়ত মানে হচ্ছে আপনার মনের ইচ্ছাটা। ফরয, নফল কোন রোযার জন্যই মুখে মুখে নিয়ত করতে হয় না। নিয়ত মনে মনে করতে হয়। আর এটা মানুষের মনে তখনই হয়ে যায় যখন মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন। যেমন : ধরুন আপনি আগামীকাল দশটার বাসে ঢাকায় যাবেন। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কি আপনাকে সেটা বিশেষ বাক্যের মাধ্যমে নিজের মনকে জানাতে হয়? কখনই না।
অনুরূপভাবে রোযার জন্য ” নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান ” ইত্যাদি কোন আনুষ্ঠানিক নিয়তের প্রয়োজন নেই । সচেতনভাবে সজ্ঞানে কাজ করলে নিয়ত আপনা আপনিই হয়ে যায়।
রোজার নিয়ত সম্পর্কে হাদিস-
নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজাসমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত করা গেলেও অন্য সব ধরনের রোজার জন্য রাতেই নিয়ত করে নেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৬/৩৪৬
রোজার নিয়ত সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য কিছু মাসয়ালা:
মাসয়ালা: ফরজ রোজার নিয়ত রাত বাকি থাকতেই করা উত্তম। উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না। ’ -সুনানে আবু দাউদ: ১/৩৩৩
এই হাদিসকে ভিত্তি ধরে ইসলামি স্কলাররা বলেন, দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না। এর পরও রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানের বিরোধী বলে তা জায়েজ নয়। -সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া: ১/১৭৩
মাসয়ালা : মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। তবে ‘নাওয়াইতু বি সাউমি গাদিম মিন শাহরি রামাজান’ মুখে উচ্চারণ করার মাধ্যমে নিয়ত করা উত্তম। -বেহেশতি জেওর: ৩/৩
অথবা এরূপ করবে, ‘নাওয়াইতুআন আসুমা গাদাম মিন শাহরি রামাজান। ’ অর্থাৎ ‘রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি। ’ এক কথায়, আরবিতে হোক বা বাংলায় হোক কিংবা নিজ নিজ ভাষায় হোক- আমি রোজা রাখছি এটা স্পষ্ট করতে হবে, এটাই রোজার নিয়ত।
মাসয়ালা : রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। একদিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট নয়। -ইলমুল ফিকাহ: ৩/১৮
কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য পুনারয় নিয়ত করার প্রয়োজন নেই।
মাসয়ালা : রাতে (সেহরির সময় থাকা অবস্থায়) রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদেক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সেহরি খেয়ে ফেলার পর আর কিছু পানাহার করা যাবে না।
এমন ধারণা ঠিক নয়। সুবহে সাদেক স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনো দোষ নেই। তা নিয়ত করা হোক বা না হোক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে রমজানের রাতে স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে প্রবৃত্ত হওয়া। ’ -সূরা বাকারা : ১৮৭
মাসয়ালা : রমজান মাসে সেহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। -কিতাবুল ফিকাহ: ১/৮৮১
মাসয়ালা : নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন- রোববারে রোজার নিয়ত শনিবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। শনিবার সূর্যাস্তের পূর্বে রোববারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিস শরিফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, হজরত হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তার রোজা নেই, যে রাতে নিয়ত করেনি। ’ -মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাউদ
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ? সারসংক্ষেপ
রমজানের রোজা রাখা যেমন ফরজ তেমনি রোজার জন্য নিয়ত করাও ফরজ। আশা করি রোজার নিয়ত করা কি ফরজ কিনা তা বুজতে পেরেছেন।