কুরবানির বিধান । ইদুল আজহার বিধান

কুরবানির বিধান । ইদুল আজহার বিধান

আজকের পোস্টে কুরবানির বিধান সম্পর্কে আলোচনা করব। কারন আপনারা অনেকেই কুরবানির বিধান জানতে চান । তাই মুলত আজকের পোস্টটি করা । যেমন ঃ কুরবানি কি, কুরবানি কাদের উপর ওয়াজিব, কুরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে , কুরবানির বিধান ইত্যাদি ।

কুরবানি কি?

কুরবানি হলঃ কুরবানির আভিধানিক অর্থ হলো কাছে যাওয়া বা নৈকট্য অর্জন করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।

কুরবানি কাদের উপর ওয়াজিব ?

কুরবানির বিধান ইসলামে অপরিসীম ।কারন একজন সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি হাতে নগদ অর্থ না থাকলে আপাতত ধার করে হলেও ওয়াজিব কোরবানি আদায় করতে হবে।

কুরবানির ক্ষেত্রে সামরথবান বলতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম ,১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ ও নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৭ ভরি সোনা অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার কুরবানি করা ওয়াজিব। 

তাই কুরবানির বিধান জানা আমাদের অতি জরুরি।

কুরবানির নামাজের নিয়ম ও দোয়া জানতে এখানে ক্লিক করুন

কুরবানির পশুর বিবরণঃ

কুরবানির বিধান অনুসারে শুধু মাত্র গৃহপালিত পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে । এ ছাড়া হালাল বন্য পশু দ্বারা কুরবানি করা যাবেনা । কুরবানির বিধান মেনে কুরবানি না করলে কুরবানি কবুল হবেনা তাই কুরবানির নিয়ম জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পরুন ।

একটি কোরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাতজন শরিক হয়ে বা সাত নামে কোরবানি করা যায়।

এ ছাড়া ও গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়। যথা: ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট। কুরবানির বিধান অনুসারে কুরবানির পশু নির্বাচনের পাশাপাশি কুরবানির পশুর বয়স অনেক বেশি খেয়াল রাখা জরুরি । কারন 

পশু ভেদে ভিন্ন ভিন্ন বয়স সীমা রয়েছে। তা নিচে উল্লেখ করা হলো ঃ

  1. উট দিয়ে কুরবানি করতে চাইলে এর বয়স সর্বনিম্ন ৫ বছর হতে হবে।
  2.  গরু ,মহিষ দিয়ে কুরবানি করতে চাইলে এদের বয়স সর্বনিম্ন ২ বছর হতে হবে।
  3. আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দিয়ে কুরবানি করতে চাইলে এদের বয়স সর্বনিম্ন  কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।

তবে ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে যদি বয়স এক বছরের হয় কিন্তু স্বাস্থ্যবান হৃষ্টপুষ্ট হয় , তাহলে এগুলো দিয়ে কুরবানি করা জায়েজ । তবে এগুলো দেখতে যদি এক বছরের মত হয় কিন্তু বয়স সর্বনিম্ন ৬ মাস হতে হবে ।

তবে ছাগলের বয়স এক বছর পুরন না হলে কন অবস্থাতেই ওই ছাগল দিয়ে কুরবানি করা জায়েজ হবে না । (কাযীখান ৩/৩৪৮)

  কুরবানির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েলঃ

  • কুরবানির ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।

(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯), ( আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫)

  • মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। (মুয়াত্তা মালেক ১৮৮) ,(বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩,),( ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
  • যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪), (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫), (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫)
  • উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (কাযীখান ৩/৩৪৮), (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)
  • যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫), (আলমগীরী ৫/২৯৮)
  • ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। (জামে তিরমিযী ১/১২০), ( আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬) 

আশা করছি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনারা কুরবানির বিধান ও কুরবানি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন । সকলের কুরবানি আনন্দে কাটুক । 

জাযাকাল্লাহ খাইরান।

কুরবানির বিধান
কুরবানির বিধান

This Post Has One Comment

  1. Rashed Miah

    Alhamdulillah

Leave a Reply

three × two =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.