রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব

  • Post author:
  • Post last modified:April 15, 2022
  • Reading time:10 mins read

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব | মাহে রমজান 2022 মাহে রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব: মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে যে জীবন বিধান দিয়েছেন সেটাই হল ইসলাম। ইসলামকে পুনাঙ্গ ও প্রগতিশীল জীবন ব্যবস্থা এবং ইসলাম সর্বকালে সর্বাঙ্গ সুন্দর আধুনিক জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম যে পাঁচটি বুনিয়াদের উপর সংস্থাপিত তার অন্যতম হচ্ছে রমজান মাসের সিয়াম।

আর এই সিয়াম বিধান দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোনআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন ‘‘ ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হল, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী গনের উপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে করে তোমরা মোক্তাকী হতে পার”।

আরো পড়ুন,

রমজানের সময় সূচি 2022

রোজা কবে থেকে শুরু হবে?

রমজানের প্রস্তুতি

রমজানের মাসআলা সমূহ

রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ

এই আয়াতে কারিমায় এটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নবীর উম্মতের জন্য বিভিন্ন সময়ে ও মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছিল। যেমন হযরত আদম (আঃ) এর উম্মতের জন্য প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা ফরজ ছিল। বনি ইসরাইলের উম্মতের জন্য হযরত মুসা (আঃ) চল্লিশটি রোজা রেখেছিলেন। যার শেষ রোজাটি ছিল আশুরার দিন। হযরত ইশা (আঃ) পবিত্র ইঞ্জিল কিতাব পাবার চল্লিশ বছর পূর্ব থেকেই রোজা রেখেছিলেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন। রমজান এমন একটি মহিমাময় ও গৌরবমন্ডিত মাস যে মাসে কোরআন মজিদ নাজিল হয়েছে। বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ট মুক্তি সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতীর সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় বিধান গ্রন্থ আল কোরআন যে মাসে নাজিল হয় সে মাসের পবিত্রতা ও পূন্য মহাতœা ও মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয় বিবেচিত হয়।

রমজান মাসের ফজিলত | মাহে রমজান 2022

শুধু কোরআন শরীফই নয়। মুসলমানের বিশ্বাস যে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সহীফা সমূহ ও এই রমজান মাসেই নাজিল করা হয়। রমজান মাসের (১ কিংবা ৩ তারিখে) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সহীফা লাভ করেন। রমজান মাসের ৩ তারিখে হযরত দাউদ (আঃ) নিকট যবুর নাজিল হয় এই মহান মাসের ১৮ তারিখে হযরত ইসা (আঃ) ইঞ্জিল লাভ করেন এই মহিমান্বিত মাসের ১২ তারিখে।

ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দ্ব্যার্থহীন ভাষা ঘোষনা করেছেন যে (এ পবিত্র মাসে) বেহেস্তের দরজা গুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ থাকে। এবং শয়তানকে (তার সহচরদের) শৃংখলা বদ্ধ করে রাখা হয় (বুখারী ও মুসলীম) এই থেকেই সহজেই অনুমিত হয় রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা মহাতœ্য কত অপরিসীম ও অতুলনীয়।

রমজান মোবারক 2022 তাকওয়া ফজিলত ও গুরুত্ব

রমজান শব্দটি এসেছে রমজ শব্দ থেকে রমজ শব্দের অর্থ হল জালিয়ে দেয়া, দগ্ধ করা রমজানের রোজা মানুষের মনের কলুষ কালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে। পাপ রাশিকে সম্পূর্ন রূপে দগ্ধ করে মানুষেকে করে তোলে পূন্যবান।

রোজা একটি ফারসী শব্দ আরবী ভাষায় রোজাকে সিয়াম বলা হয়। সিয়াম শব্দের বহু বচন হল সাত্তম এখানে উল্লেখ্য যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ও সংযম পালন ইসলামে রোজা বা সিয়াম নামে অভিহিত হয়।

দুঃখ জনক হলেও সত্য যে একথা অনেকেই জানে না যে সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত ুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার মানেই রোজা নয়। এই গুলি সিয়াম সাধনার বাহ্যিক অনুষ্ঠান মাত্র। শুধু মাত্র খাদ্য ও পানীয় পরিহার করা এবাদত বলে ইসলামে বিবেচিত হতে পারে না।

এই ইবাদতের জন্য প্রয়োজন তাকওয়া, যাতে করে মানুষ মোত্তাকী ও পরহেজগার হইতে পারে। এই তাকওয়াই হচ্ছে সিয়ামের সার বস্তু, রোজার আসল কথা। হযরত উমর (রাঃ) কাব আল আহবার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, তাকওয়া কি? উত্তরে কা’ব (রাঃ) জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি কখন ও কষ্টাকাকির্ন পথে চলেছেন? তখন কি পন্থা অবলম্বন করেন? হযরত উমর (রাঃ) বলেন, আমি সতর্ক হয়ে কাপড় গুটিয়ে চলেছি। কা’ব (রাঃ) বলেন ইহাই তাকওয়া।

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব | মাহে রমজান 2022

পৃথিবীতে চারিদিকে পাপ পংকিলতার কাটা ছড়ানো হয়েছে তা থেকে সর্তক ভাবে নিজেকে বাচিয়ে চলার নাম হল তাকওয়া, তাকওয়ার গুনে বিভূষিত ব্যক্তিকে বলা হয় মোক্তাকি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দ্বার্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেন যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বা অন্যায় কাজ কর্ম পরিত্যাগ করিবে না, তাহার শুধুমাত্র খানা-পিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।

এ ধরনের হতভাগ্য রোজাদারদের প্রসঙ্গে তিনি ঘোষনা করেছেন ‘‘ অনেক রোজাদার এমন আছো যাদের ভাগ্যে ুধাও পিপাসা ছাড়া অন্য কিছু জোটেনা। তেমনি রাত্রিতে এবাদত কারী এমন অনেক মানুষ আছে যারা রাত্রি জাগরন ব্যতিত আর কিছুই লাভকরতে পারে না।

এই হাদিস দুটি থেকে সহজেই প্রতিয়মান হয় যে, ুধাও পিপাসা প্রকৃত এবাদতের অবলম্বন মাত্র। কিন্তু প্রকৃত এবাদত ‘তাকওয়া’ মাধ্যমে নিজের নফ্সকে দম্ম করার আন্তরিক প্রয়াসের মাধ্যমেই সাধিত হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি সর্বাস্ত করনে এ প্রয়াস গ্রহন করে না তার রোজা রাখার কোন স্বার্থকতা নেই।

৬১০ খৃষ্টাব্দে রমজান মাসে কোরআন মাজিদ নাজিলের সূচনা হয় এবং বিভিন্ন প্রোপটে খন্ডে খন্ডে নাজিল হতে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ১২ বছর পর আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করে এসে, সেখানে একটা নগর রাষ্টের পত্তন করেন। মসজিদে নববী স্থাপন করেন।

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মদিনার অধিবাসী সব সম্প্রদায়কে ঐকমতো এনে একটি শাসনতন্ত্রও প্রনয়ন করেন। অর্থনৈতিক বিধানও প্রদান করেন যাকাত বিধান নাজিল হলো অর্থাৎ একটা আদর্শ কল্যান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষের ১৫ সাবান কিবলা পরিবর্তন করে মক্কা মুকাররমা মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের বিধান হলো। এবং নাযিল হল সিয়াম বিধান।

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে। ‘‘রমজান মাস এতে নাযিল হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য ও অসত্যের মধ্যে পার্থক্য কারী আল কুরআন।

রমজান মাসের ফজিলত

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস প্রত্যক্ষ করবে তারা যেন এতে সিয়াম পালন করে। ২য় হিজরীর পহেলা রমাদান মোতাবিক ৬২৪ খৃষ্টাব্দের পহেলা মার্চ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী প্রিয় নবী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) সর্ব প্রথম রমদানের সিয়াম পালন করা শুরু করেন। এরই আগের দিন অর্থাৎ সাবান মাসের শেষ দিনে তিনি সাহাবায়ে কিরামের সমাবেশে এক দীর্ঘ খুতবা দেন।

সেই খুতবায় তিনি বলেন ‘‘হে মানুষ তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান প্রাচুর্য মাস, এই মাসেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও উক্তম এক রজনী। এই মাসের সিয়াম কেই আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। এর রাতে দন্ডায়মান হওয়াতে (তারাবীর সালাত আদায়ে) রয়েছে সওয়াব। যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করার যে সওয়াব তা পাবে।

আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসের সক্তরটি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব লাভ করবে। এইটা হচ্ছে ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। এইটা হচ্ছে সহমর্মিতার মাস, আর এইটা হচ্ছে এমন একটি মাস যাতে মোমিনের রিযিক বাড়ীয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সেই ব্যক্তির জন্য গুনাহ মাফ পাবার, এবং দোজখের আগুন থেকে মুক্তি পাবার কারন হয়ে যাবে। এছাড়া তার সওয়াব হবে সেই সায়েমের সমান কিন্তু সেই সায়েমের সওয়াব একটুও কমবে না।

সাহাবায়ে কেরাম বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদের মধ্যে অনেকেই রোজাদারদের ইফতার করানোর সামর্থ নেই। হযরত রাসুল (সঃ) বললেন পেটভরে খাওয়ানো হবে এমনটা তো নয়। এক চুম্বক দুধ অথবা এক টুকরো খেজুর কিংবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করালেই আল্লাহ তায়ালা তাকে সওয়াব দান করবে। আর যে ব্যক্তি কোন সায়িমকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউদ (হাউজে কাউছার) থেকে পানি পান করাবেন।

যার ফলে সে জান্নাত দাখিল হওয়ার আগ পর্যন্ত পানি পিপাসা হবে না। এ মাসে যার প্রথমাংশ রহমাতের, মধ্যাংশ মাগফিরাতের এবং শেষাংশ দোজখের আগুন থেকে মুক্তির। আর যে ব্যক্তি এ মাসে অধিনস্তদের কাজের ভার লাগব করে দেবে আল্লাহ তায়ালা তাকে মা করে দেবেন। এবং দোজখ থেকে তাকে নাজাত করে দেবেন।

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব

দ্বিতীয় হিজরীর মাহে রমাদানে প্রথম সিয়াম পালিত হয়, আর সেই রমাদানের ১৭ তারিখে মোতাবিক ৬২৪ খৃষ্টাব্দে ১৭ ই মার্চ শুক্রবার মদিনা মনওয়ারা থেকে ৮০ মাইল দনি পশ্চিমে অবস্থিত বদর প্রান্তরে সংগঠিত হয় যে যুদ্ধ সেটাই বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত।

এই যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবী নিয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নেতৃত্বে কাফির, মুশরিক, বাহীনির প্রায় এক হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করেন। এই যুদ্ধে ইসলামের সুদৃড় প্রসারী বিজয়ের ধারা নির্মান করে দেয়।

৬৩০ খৃষ্টাব্দের রমজান মাসেই ফতেহ মক্কা বা মক্কা বিজয় সাধিত হয়েছিল। এই প্রসঙ্গেঁ সুরা বনি ইসরাইলের ৮১ আয়াতে ইরশাদ হয়, “জায়াল হংক্ক ওয়াজাহাকাল বাতিল ইন্নাল বাতিলা কানা জাহুকা” সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দুরীভূত, নিশ্চয়ই মিথ্যা দূর হয়। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন যখন মাহে রমাদানের প্রথম রাত আসে, তখন একজন আহব্বান কারী এই বলে আহব্বান করেন ‘‘হে কল্যান কামী অগ্রসর হও। হে মন্দান্বেষী থামো। (তিরমিজি শরীফ)

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন রোজা আমার জন্য আমিই এর পুরস্কার-দেব। কারন বান্দাতো তার যৌন ুধা এবং দৈহিক ুধা একমাত্র আমার জন্যই পরিহার করে। এই মাসের শ্রেষ্টত্বের আর একটি হচ্ছে এই মাসের শবে কদরেই কাল্লামুল্লাহে শরীফ নাজিল হয়, এই রাত্রি হাজার মাস হইতে উক্তম।

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব | মাহে রমজান 2022

মহানবী (সঃ) বলেছেন, রোজাদার দুটি সন্তুষ্টি উপভোগ করবে, আর তার মধ্যে একটি দৈাহিক ইফতারের সময় আরেকটি পরকালে আল্লাহর সহিত দিদার লাভের সময় উপভোগ করবে। নবী করিম (সঃ) উল্লেখ করেছেন রোজা ঢাল স্বরূপ যখন রোজা এসে উপস্থিত হয় তখন তোমরা অশ্লিল ভাষা এবং উচ্চ স্বরে চিৎকার করা থেকে বিরত থাকবে।

রাইয়াল নামক দরজা দিয়ে রোজাদার মোমেনকে বেহেশতে প্রবেশ করানোহবে। এ মাসের রোজা কোটি কোটি মুসলমানের একই সঙ্গে সারভাই ভাল ট্রেনিং এর মত। আর এতে এসে যায় নিয়ম শৃংখলা কষ্ট সহিঞ্চুতা ধার্মিকতা পরোপকার সৎ চিন্তা সৎ জীবন যাপন।

স্বাস্থ্য বিধি পালন বাড়তি মেদ-হ্রাস ইত্যাদি। এ মাসে মুসলমানেরা যাকাত ফিতরা দান খয়রাত করে। রোজা না করাতে বা ক্রটিতে কাফফারার অর্থদেয় গরীরদের। এই হল গরীরে পে অর্থ নৈতিক এজেন্ডা রমজান মাসের। যাকাতই দরিদ্র দূর করতে সম এনজিওদের গলাকাটা সুদী মহাজনী ব্যবসায় নয়।

সমস্ত মুসলিম জাহানের পাপরাশিকে বিদগ্ধ ও ভম্মীভূত করার জন্য এই রমজান মাসের সীয়াম সাধনাই হোক আল্লাহ পাকের কাছে একমাত্র উছিলা। আল্লাহ পাক মুসলিম বিশ্বকে এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব উপলদ্ধি করার তৌফিক দান করুন। এটাই আমাদের একান্ত কামনা ও প্রত্যাশা।

রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস বড় নেয়ামাত ও ফজিলতের মাস

লেখক : অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী

এম.ফিল গবেষক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য বড় নেয়ামাত ও ফজিলতের মাস। এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এর উপর নাযিল করেন পবিত্র আল কুরআন। আল কুরআনের সুরা বাকারাতে উল্লেখ রয়েছে- (রমযান মাসে অবতীর্ণ করা হয় কুরআন)। শুধু আল কুরআন নাযিল দ্বারাই এ মাসের ফজিলত ক্ষ্যান্ত করা হয়নি।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- (এ মাসে এমন একটি রাত্র আছে যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে অধীক)। যেমন সুরা আল কদর-এ বর্ণিত হয়েছে- (কদরের রাত সহস্র মাসের চেয়ে উত্তম)। রাসুল (স:) বলেছেন- (যে ব্যক্তি ঈমান ও সদিচ্ছাসহ রোজা পালন করলো ঐ ব্যক্তির পূর্বের কৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে)।

রমাজান মাসের রোজা আল্লাহ তায়ালা সকল বয়স্ক জ্ঞানবান লোকের উপর ফরজ করে দিয়ে ঘোষণা করেছেন, সুরা রাকারাতে বর্ণিত হয়েছে- (তোমাদের উপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে যেভাবে ফরজ করে দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়াবান হতে পার)। সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩। এ আয়াতে একটি লক্ষ্যণীয় বিষয হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা এখানে যারা রোজা রাখবে তাদের জন্য ফলাফল স্বরূপ বলা হয়েছে তারা তাকওয়াবান হবে।

রমজান মাসে তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব

তাকওয়া কি? এবং একটি মাস উপবাস থেকে এত ত্যাগ করে ঐ বস্তু হাসিল করতে হবে এর মূল রহস্যই বা কি? এ বিষয়টি আমরা আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট করতে চাই। তাকওয়া শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে, তন্মন্ধে পরিত্যাগ করা, আত্মরক্ষা করা ও খোদাভীতি প্রসিদ্ধ।

পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয়, মহান আল্লাহর ভয় অন্তরে সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে সকল অপকর্ম থেকে বিরত রাখা এবং সকল কর্তব্যসমূহ পালন করা। এবার মূল আলোচনায় আসা যাক,অাল্লাহ  তায়ালা তাকওয়া অজর্নের জন্য বহুবার মানুষকে তাগিদ প্রদান করেছেন পবিত্র আল কুরআনের মাধ্যমে। যথা বলা হয়েছে- (হে ইমানাদারগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃতুবরণ করো না) সুরা আল ইমরান-১০২) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- (নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সে যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খোদাভীরু)।

অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে আগামী দিনের জন্য কি প্রস্তুত করেছে, আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত) সুরা হাশর-১৮। অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও) সুরা তওবা-১১৯। অন্য আয়াতে রয়েছে- (নিশ্চয়ই আল্লাহ যারা মুত্তাকী এবং যারা সৎকর্মপরায়নশীল তাদের সাথে রয়েছেন) সুরা নাহল-১২৮। অন্য আয়াতে রয়েছে- (তোমরা সৎ ও তাকওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কর তোমরা পাপ ও সীমালংঘনের কর্মে সহযোগিতা করনা তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা) সুরা মায়েদা-২।

অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে ইমানদারগণ তোমরা অাল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার। সুরা বাকারা-১৮৯। অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে নবী আপনি আল্লাহকে ভয় করুন এবং আপনি কাফের ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী। সুরা আহযাব-১। এছাড়া ও অসংখ্য আয়াত রয়েছে যা দ্বারা আল্ল¬াহ তায়ালা মানব জাতি এমন কি নবীকেও তাকওয়া অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যা দ্বারা তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা বুঝা যায়। কেন না তাকওয়া অর্জন ছাড়া একজন মানুষ মুমিনই হতে পারে না।

তাকওয়া দ্বারা মানুষের গোটাজীবন পরিচালিত হয়। তাই যার মাঝে তাকওয়া নেই সে তার গোটা জীবন কুফরী অবস্থায় অতিবাহিত করে। পক্ষান্তরে যার মাঝে তাকওয়া রয়েছে তার গোটাজীবন পরিচালিত হয় মহান আল্লাহ  প্রদত্ব বিধান ও রাসূল (সা:) প্রদর্শিত আদর্শ মোতাবেক। তাই মানুষকে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্ব প্রথম তাকওয়া অর্জন করতে হবে। কেননা তাকওয়া দ্বারাই প্রতিটি মানুষ স্ব-মহিমায় অবস্থান করতে পারে।

তাকওয়া দ্বারা শুধু পরকালে লাভ রয়েছে এটাই শেষ কথা নয়। পার্থিব সুখ-শান্তি বজায় রাখতে হলে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া অর্জন করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতটা ব্যাপক তা সূক্ষ্মভাবে আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট হয়ে যায়।

যেমন পূর্ববর্তী যত নবী ও রাসুল এ ধরায় আগমন করেছেন তাঁরা সকলেই তাঁর স্বীয় জাতীকে সর্বপ্রথম যে দাওয়াত পেশ করেছিলেন তার মধ্যে আল্ল¬াহকে উপাস্যরূপে গ্রহণ এবং তাকওয়া অর্জনই ছিল মূল বিষয়। যথা হযরত হুদ (আ:) এর সম্পর্কে বলা হয়েছে- (স্মরণ করুন সে সময়ের কথা, যখন হুদ তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন তোমরা কি তাকওয়াশীল হবে না?) সুরা শুয়ারা-১২৪।

অন্য আয়াতে হযরত সালেহ (আ:) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- (স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন সালেহ (আ:) তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত রাসূল। তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর)। সুরা শুয়ারা-১৪২।

তেমনি অন্য আয়াতে হযরত লুৎ (আ:) এর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- (লুৎকে তার সম্প্রদায় মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যে রাসূল হিসেবে এসেছিল। যখন সে তাঁর সম্প্রদায়কে তোমরা কি মুত্তাকী হবে না? আমি তোমাদের নিকট বিশ্বস্ত রাসূল। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর)। সুরা শুয়ারা-১৬১। অন্যত্র হযরত শোয়াইব (আ:) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- (স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন শোয়াইব (আ:) তোমরা কি মুত্তাকী হবে না? আমি তোমাদের নিকট বিশ্বস্ত রাসূল। তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। সুরা শুয়ারা-১৭৭।

পৃথিবীতে চুরি-ডাকাতি থেকে মুক্ত থাকতে পুলিশ চৌকিদার রাখা হয়। দোকান পাট সংরক্ষণ রাখতে সার্কিট ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ও উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ সকল অন্যায়ের জন্য কোট-কাচারী, জেল, উকিল, জজ ইত্যাদি নিযুক্ত করা হয়। আর এ সকল তখন প্রয়োজন হবে না যখন প্রতিটি মানুষ একটি বিষয় বা একটি চরিত্র অর্জন করতে সক্ষম হবে তা হচ্ছে তাকওয়া।

বর্তমান যুগে মারামারি, হানাহানি, চুরি-ডাকাতি, গুন্ডামী, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, সুদ-ঘুষ, কেলেঙ্কারী, করফাকি, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, কর্মেফাঁকি এ সকল বিষয় অহরহ চলছে। আর যার প্রতিরোধ সরকার হরেকরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও এর কোন সমাধান করতে পারছে না, কিংবা পারবে বলে আশা করা যায় না। তবে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ব একটি পদক্ষেপই পৃথিবীর যাবতীয় দুর্নীতি ও কুকর্ম বিলুপ্ত করতে সক্ষম তা হচ্ছে- মানুষকে তাকওয়াবান হতে হবে।

যদি কোন মানুষের মাঝে খোদাভীতি থাকে তাহলে সে কোন প্রকার অশ্ল¬ীল বা দুর্নীতি কাজে জড়িত হতে পারে না। মূলত এটাই তাকওয়া। আর যখনই কোন দুর্নীতিমূলক কর্ম সামনে আসবে তখন তার মন বাধা প্রদান করবে যে, আমাকে কাল কিয়মাতের দিন আল্ল¬াহ এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে তখন আমি কি উত্তর দিব। এ ধরনের খোদাভীতি সকল মানুষের অর্জন করা একান্ত অপরিহার্য বিষয়।

রমজান মাসের ফজিলত তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব

যে ব্যক্তি এ গুণ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সে মুত্তাকী। তার ইহকালে যেমন মানুষের কাছে সম্মান রয়েছে, পরকালে রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত। যেমনি পবিত্র আল কুরআনের সুরা আ’রাফের ৯৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- (যদি গ্রামবাসিরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি আসমান এবং যমিনের সকল বরকতসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতাম।

তেমনি অন্য আয়াতে বর্ণিত আছে- (নিশ্চয়ই পরকাল যারা মুত্তাকী তাদের জন্য মঙ্গলময় হবে) সুরা আরাফ-১৬৯। এ গুণ লাভ করতে হলে সর্বোত্তম সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। কারণ এ মাসে মানুষ রোজা রেখে সারাদিন কোন প্রকার গুনাহের কাজ তার দ্বারা সম্পাদন হয় না।

রাতের বেলা নফল নাজ পড়ে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে। ফলে একজন মানুষ তাকওয়া অর্জনের মূলধারা বা পথ খুঁজে পায়। রমযানের মধ্যে মানুষ কোন প্রকার খারাপ বা অশ্ল¬ীল কাজ করতে সাহস করে না। রমযান মাসে মূল যে শিক্ষা তা মূলত এটাই যে তাকওয়া অর্জন। মানুষ রোযা রাখে সে সারাদিন উপবাস করে। তার সামনে অনেক খাবার ও পানীয় থাকে সে ইচ্ছে করলে তা খেতে পারে, কিন্তু সে তা স্পর্ষ ও করে না। বহু সুযোগ থাকে মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে কিছু খেয়ে নেয়ার, কিন্তু সে খায় না।

এর মূল কারণ সে মহান আল্ল¬াহকে ভয় করে। যেমন হাদিসে কুদসিদ্বারা মহান আল্ল¬াহর ঘোষণা হচ্ছে- (রোযা আমার জন্য আর এর বিনিময় আমিই দিব)। এখানে যেমন মানুষ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে কিছু খায় না বা পান করে না সেহেতু সে জানে মানুষ না দেখলেও আল্লাহ ঠিকই সবকিছু দেখেন এবং তিনি সর্বত্র আছেন।

তেমনি মানুষ পরবর্তী সময়ে যাদি তার এ চরিত্র বা এ অবস্থা চালু রাতে পারে তাহলে সে পরবর্তী সময় কোন দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ড করতে পারে না। কারণ তারা মনে ঐ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপে জানা আছে যদি সে কোন কুকর্ম করে তাহলে আল্লাহ তার এ কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবে।

মাহে রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব

রমজান এমন একটি মাস যে মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। শয়তান কে শৃক্মখলাবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে সে মানুষ কে কুকর্মে প্ররোচিত করতে না পারে। অগণিত জাহান্নামীকে এ মাসের উসিলায় আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। একটি নফল এবাদতের ছাওয়াব একটি ফরজ এবাদতের সমতুল্য করে দেন। একটি ফরজ এবাদতের ছাওয়াব ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেন। এভাবে পবিত্র রমাযান মাস পুরোটাই একটি নেয়ামত ও বরকত পূর্ণ মাস।

যদি কোন ব্যক্তি চায় অন্যান্য সময়ে ভাল কাজ করবে তার উচিত এ মাসে পূর্ণরূপে এবাদতে মশগুল হওয়া। কারণ এর দ্বারাই সে পরবর্তী সময় নিজেকে একজন মুত্তাকী বান্দা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। তাই রমজান মাস মানুষকে তাকওয়ার শিক্ষাই দিয়ে থাকে। রমজান মাস আসলে স্বাভাবিকভাবে মানব সমাজে অনেক পরিবর্তন আসে।

এসব পরিবর্তন মানব জাতিকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। পরবর্তী ১১টি মাস যাতে সে নিয়মমাফিক চলতে পারে তারই একটা ট্রেনিং হিসেব পবিত্র রমাজান মাস মানুষের দ্বারে দ্বারে প্রতি বছর একবার করে ঘুরে আসে। যে ব্যক্তি এ মাস কে গুরুত্ব সহকারে অতিবাহিত করবে সে পরবর্তী ১১টি মাস সকল কাজই মহান আল্ল¬াহর রেজামন্দী মোতাবেক করতে সক্ষম হবে।

যে ব্যক্তি এ মাসকে অবহেলায় অতিবাহিত করল রোজা রাখলোনা, নামাজ পড়লো না, দান ছাদকা করলো না, পবিত্র রমজান মাস তার জন্য অভিসম্পাত করে। যেমনিভাবে রাসূল (সা:) এরশাদ করেছেন- (ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পেল অথচ এবাদত বন্দেগী করে সে আল্লাহ কাছে নিজের গুনাহকে ক্ষমা করিয়ে নিষ্পাপ হতে পারলো না)। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত পবিত্র মাহে রমজানকে যথাযথভাবে এবাদতের মাধ্যমে অবিবাহিত করা।

এবাদত এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা, পবিত্র আল কুরআন অধ্যয়ন করা, নফল এবাদত বেশি পরিমাণে আদায় করা। সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। হাত, মুখ, চোখ ও অন্যান্য অঙ্গপত্যঙ্গ দ্বারা যেন কোন প্রকার গুনাহ সংঘটিত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা। কেননা রাসূল (সা:) বলেছেন- (অনেক রোজাদার আছে যাদের রোজা উপবাস ছাড়া কিছুই হয়না।

কতিপয় লোক আছে যারা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে তাদের এ নামায রাত জাগ্রত ছাড়া কোন উপকারে আসে না)। এর কারণ হচ্ছে যারা রোজাও রাখে আর অন্যান্য পাপ কর্ম ছাড়তে পারে না তাদের এ রোজা ঐ ব্যক্তির কোন উপকার করতে পারে না। তাই রোজা রাখতে হবে হক আদায়সহ। অর্থাৎ সকল অপকর্ম পরিত্যাগ করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে যেন এর ফলাফল বিদ্যমান থাকে তার সার্বিক ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে যদি রোজার মাস কে হক আদায় করে রোজা রাখা যায় তাহলে ঐ ব্যক্তি তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হবে। 

আর তাকওয়া একবার যদি কারো মাঝে এসেই যায় তার হইকাল ও পরকাল উভয় জগতে সফলতা লাভ করতে পারবে। তাকওয়া অর্জন করতে বেশি এবাদত করা দরকার। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র মাহে রমজানের মূল শিক্ষা তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন। 

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব | মাহে রমজান 2022

তায়েফে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যখন দ্বিন প্রচার করতে গেলেন তখন তায়ফবাসী পাথর মেরে ওনাকে রক্তাক্ত করে দিলেন। হযরত জীবরিল (আ:) দুপাহাড়কে একত্রিত করে তায়েফবাসীকে ধংস করে দেয়ার অনুমতি চাইলেন।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে আল্লাহ, তাদেরকে হেদায়েত দান করুন”। আর একবার হযরত জীবরিল (আ ) বললেন “যে রমজান মাস পেয়েও তার গোনাহ ক্ষমা করে নিতে পারল না সে ধংস হোক”। এটা শুনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন “আমীন”।তায়েফবাসী যারা ছিল কাফের, তাদের জন্য বদদোয়া করলেন না, অথচ মুসলমানদের জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বদদোয়া করলেন।

এটা কেনো? একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝা যাক-মনে করুন একটি ১৫,১৬ বছরের ছেলেকে আপনি ৫ + ৫ কত হয় জিগ্যেস করলেন, সে যদি না পারে তখন আপনি অবশ্যই আশ্চর্য হবেন এবং তাকে তিরস্কার করবেন, এমন সহজ একটি যোগ না পারার কারণে।

রমজান মাসের এমন ফজীলত এবং আল্লাহর এত অসীম রহমত নাজীল হয় যে, এরপরও কেউ যদি তার গোনাহ মাফ করে নিতে না পারে, তাহলে সে-ও তেমন তিরস্কারে যোগ্য, যেমন যোগ্য একটি ১৫, ১৬ বছরের ছেলে ৫ + ৫ কত সেটা যদি না বলতে পারার কারণে ।

হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (রহ:) তার মকতুবাতে বলেন, রমজান মাসে যে রহমত নাজীল হয় তার তুলনায় অন্যান্য মাসের নাজিলকৃত রহমত, সমুদ্রের তুলনায় এক ফোটা পানির মতো। এই কারণে সমস্ত আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে রমজান মাসে।

এই মাসে কোনো নফল করলে সেটা ফরজের সমান সওয়াব, আর কোনো ফরজ করলে সেটা ৭০ গুণ সওয়াব। পূর্ববর্তি মুত্তাকী, আল্লাহওয়ালা গণ একজন আর একজনকে প্রশংসা করার সময় বলতেন, সেই ব্যক্তি এতগুলো রমজান পেয়েছে তার জীবনে, এটাই তার গ্রহনযোগ্যতার প্রমান, সোবহানাল্লাহ। হাদিস শরীফে এসেছে, রসুলুল্লাহ দোয়া করতেন “হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন”। 

এ মাসটি কত বরকতময় যে তা পাবার জন্য আল্লাহর রসুল পর্যন্ত দোয়া করতেন। সুবহানা্ল্লাহ আল্লাহ-তাআলা ক্বোরআন কারীমায় বলেন –

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

(সুরাহ বাকারাহ: ১৮৩)

উপরের আয়াতে আল্লাহতাআলা বলেন, রোজা এই কারণে ফরজ করা হয়েছে যাতে আমরা পরহেজগার, মুত্তাকী হতে পারি। আর পরহেজগার হবার জন্য প্রথম গোনাহ পরিত্যাগ করতে হবে, তারপর নেকী বেশী বেশী করে করতে হবে।

রমজান মাসের ফজিলত ও গোনাহ বর্জন

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন “অনেকে রোজার দ্বারা ক্ষুধার্ত এবং তৃষনার্ত ছাড়া অন্য কিছুই লাভ করেনা। অন্য এক হাদিস শরীফে বলেন “যে গর্হিত কথাবর্তা এবং পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে পারেনা, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার তার খাবার এবং পানীয় ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থ্যাৎ তার রোজা গ্রহণীয় নয়। সহীহ আল বুখারী (ভলি:৩, হাদিস:১২৭) সবরকম গোনাহ থেকে বেচে থাকতে হবে।

এর মধ্যে আর একটি ভয়াবহ গোনাহ হোলো গীবত। গীবতে একটি ঘটনা নীচে বলা হোলো: গীবত থেকে বেচে থাকা: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর যুগে দুই মহিলা রোজা রাখল। রোযায় তাদের এত কষ্ট হোলো যে, তারা মৃত্যুর মুখোমুখী হোলো। রসুলুল্লাহ এর খেদমতে বিষয়টি জানানো হলে তিনি তাদের কুলি করতে বললেন। তারা কুলি করলে তাদের মুখ থেকে ছোটো গোস্তের টুকরা বের হোলো। তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, আমরা তো কোনো পানাহারই করিনি।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, মুলত তোমরা রোজা রেখে অন্যের গীবত করেছ। আর গীবত হোলো মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া। বর্তমানে আমাদের এমন অব্হা যে, চুপ থাকলে সওয়াব হয়, আর কথা বললে গীবত করি। অনেকে তো এটাকে গোনাহ মনে করি না। সাধারন মুসলমান থেকে শুরু করে আলেমগণ পর্যন্ত এই গোনাহে লিপ্ত।

গীবতে আর একটি ভয়াবহ দিক হোলো, আপনি যার গীবত করছেন, তার গোনাহ গুলো আপনার আমলনামায় চলে আসবে আর আপনার নেকীগুলো তার আমলনামায় চলে যাবে। এমনি আমাদের আমল কত কম, এরপর যদি নেকগুলো চলে যায়, তাহলে আফসোসের বিষয়। হযরত শেখ শাদী (রহ:) ছোটকালে তার বাবার সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন।

একদিন তিনি তার পিতাকে বললেন আব্বা বাসার অন্যান্যরা কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছে না। তার পিতা বললেন, “তারা তোমার চেয়ে উত্তম, আরো ভালো হোতো তুমি যদি নামাজ না পড়ে তাদের মতো ঘুমিয়ে থাকতে।” শেখ শাদি (রহ:) এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন “তারা ঘুমিয়ে আছে অথচ কারো গীবত করছে না , যেটা তুমি করছ”। ভাবলে অবাক হতে হয়, কত সতর্ক ছিলেন তারা। আজ আমরা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ মনে করে গীবত করি। যেটাও শয়তানের ধোকা।

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব এবং অন্যান্য গোনাহ

আসুন এই রোজায় সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করে ফেলি। মনে করি এটাই আমাদের শেষ রোজা। যারা মোবাইলে গান শোনেন তারা অন্তত এই মাসটা গান বন্ধ রাখুন, এর পরিবর্তে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, কাসিদা শুনুন। যাদের বাজারে দোকান আছে, অন্তত এই মাসের সম্মানে টেলিভিশন বন্ধ রাখুন, গান বন্ধ রাখুন। হয়ত এর ওসীলায় আল্লাহ তাআলা আপনাকে/আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

গোনাহ সব সময় বড় ভাবুন, কোনো গোনাহ-ই ছোটা না। আশরাফ আলী থানভী (রহ:) বলেন, কেউ কি কখনও বলে এটা ছোট আগুন ওটা বড় আগুন। ছোট হোক, বড় হোক পুড়িয়ে ধংস করার জন্য এক শলতে আগুনই যথেষ্ট। তেমনি গোনাহ ছোট হোক বা বড় হোক সব ক্ষতিকর। একবার এক বুজুর্গ ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দেখলেন এক ব্যক্তি বসে বসে কাদছেন।

এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সেই ব্যক্তি বললেন অনেক আগে এই জায়গায় আমি একটি গোনাহ করেছিলাম, সেই কথা মনে করে কাঁদছি। সুবহানাল্লাহ। একেই বলে প্রকৃত খোদাভীতি। আরা আমাদের অবস্হা এমন, গোনাহ করে গর্ব করে বেড়াই। একটি জিনিস মনে রাখবেন, খাবার থেকে বিরত রাখা নিজেকে সহজ, কিন্তু গোনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা খুবই কঠিন। আর যদিও গোনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়, অন্তরকে আল্লাহ ছাড়া সমস্ত কিছু থেকে বিরত রাখা আরো কঠিন

রমজান মাসের ফজিলত ও নেকী অর্জন

সারা বছর আমরা আমাদের জন্য ব্যয় করছি, একটি মাস না হয় আল্লাহর জন্য ব্যয় করলাম । মহিলারা জিকির করতে করতে সেহরী, ইফতার তথা সবসময় খাবার রান্না করতে পারেন পুরুষরা জিকির করতে করতে ফসল কাটবেন অফিসে চাকরী করতে পারেন। এতে আমাদের কাজও সমাধা হবে, সাথে সওয়াবও পেতে থাকব। কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে, সম্পূর্ণ কাজটি তাহলে সওয়াবের মধে গন্য হবে।

রমজান মাসের ফজিলত ও নেককারদের আমল

আসুন আমরা দেখি আগেকার মুত্তাকী, পরহেজগার ব্যক্তিগণ কিভাবে নিজের জীবন অতিবাহিত করতেন। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ:) ছিলেন প্রধান বিচারপতি অথচ দৈনিক ২০০ রাকাত নফল নামাজ পড়তেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ:) রোজার মাসে দিনে এক খতম, রাতে তাহাজ্জুদে ১ খতম এবং তারাবীতে ৩ খতম অর্থ্যাৎ রোজার মাসে আনুমানিক ৬৩ বার কোরআন খতম দিতেন।

হযরত আলী কুরাইশি (রহ:) মাঠে কাজ করতে যেতেন আর মুখে মুখে জিকির করতেন। এভাবে প্রতিদিন উনি ৭০ হাজার বার আল্লাহর জিকির করতেন ।জান্নাতে মুমিনদের একমাত্র আফসোস থাকবে একটি বিষয় নিয়ে, দুনিয়াতে জিকির ছাড়া যে সময় অতিবাহিত করেছে শুধুমাত্র সেই সময়টা নিয়ে ।আল্লামা শারানী (রহ:) বলেন, আমরা এমন পুণ্যবাণদের দেখা পেয়েছে যারা রোযার মাসে হাসি-তামাশা থেকেও নিজেকে বিরত রাখত।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন?

চলুন নিজের হিসেব নেয়া যাক। আমাদের রোজা কি অবস্হায় আছে? আসলেও কি আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হচ্ছে? ইমাম গাজ্জালী (রহ:) এর এই বিশ্লেষন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লে আমরা নিজেরাই নিজেদের রোজাকে মুল্যায়ন করতে পারব।

ইমাম গাজ্জালী (রহ:) বলেন রোজা ৩ প্রকার

  • ১। সাধারণের রোজা: সাধারণ মুসলিমগণ যে রোজা রাখে, খাবার, পানীয় এবং স্ত্রী-মিলন থেকে বিরত রাখা।
  • ২। যোগ্য ব্যক্তির রোজা বা কতিপয় মুসলিমের রোজা: এই ক্ষেত্রে উপরের বিষয়টি ছাড়াও হাত, পা, দৃষ্টি এমন সমস্ত জিনিসকে গোনাহ থেকে বিরত রাখে। অর্থ্যাৎ চোখের গোনাহ পর-নারী, পর-পুরুষকে দেখা, মুখের গোনাহ যেমন গীবত করা ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
  • ৩। সর্বোচ্চ পর্যায়ের রোজা: এই ক্ষেত্রে সে ১ম ও ২য় সবকিছু পালন তো করেই, নিজের মনকে সমস্ত খারাপ চিন্তা থেকে বিরত রাখে এবং শুধু আল্লাহর দিকে নিমগ্ন রাখেন। এটা খুবই কঠিন, যেটা একমাত্র নবী, রসুল, সর্বোচ্চ পর্যায়ের যারা মুত্তাকী তারাই এটা পালন করতে পারেন।

এখন আমরা নিজেকে প্রশ্ন করি। ওপরের ৩টি শর্ত মেনে আমরা কি আমাদের রোজা পালন করি??

রমজান মাসের ফজিলত উপসংহার

মনে রাখবেন, বাহিরে মসজিদ নির্মান করা সহজ, কিন্ত অন্তরে মসজিদ নির্মান করা খুবই কঠিন। এর জন্য অলীতে গলীতে এত মসজিদ হবার পরও আমাদের অন্তর মসজিদের মতো পবিত্র হচ্ছে না, সবসময় গীবত, কলহ, বিবাদ লেগেই আছে। এক মুহুর্ত অবহেলা করবেন না।

এমনও হতে পারে আমি হাসি-তামাশায়, গোনাহের কাজে লিপ্ত আছি অথচ আমার কাফনের কাপড়ে দোকানে এসে গেছে। মানুষ আমার জানাজা নামাজ পড়ার আগে, আসুন আমরা আমাদের নামাজ পড়া শুরু করে দেই। আসুন এই রমজানেই সেটা করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন!!! তথ্যসূত্র: ১। সীরাতুল আউলিয়া – আল্লামাহ ওহহাব শারাণী (রহ:) ২। খুতবাতে যুলফিকার – মাওলানা যুলফিকার আহমাদ (দা:বা:) ৩। মকতুবাত শরীফ- মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (রহ) ৪। সহীহ আল বুখারী ৫। রোজা বিষয়ক লেখা – ইমাম গাজ্জালী (রহ:)

তথ্য সংগ্রহ এবং কৃতজ্ঞতায়:

  • কুরআন সুন্নাহ হাদিস
  • ইমাম বাতায়ন
  • অনলাইন মিডিয়া
  • এবং অন্যান্য ব্যক্তিত্ব

আরো পড়ুন:

রমজান মাসের ফজিলত
রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব

Marketer Rashed

This Is Marketer Rashed! A Digital Marketing Expert With Over 6+ Years of Experience On Digital Marketing. CEO & Founder at "Digital Marketing MasterMind" and Madaripur Outsourcing Institute.

Leave a Reply

7 + 12 =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.