বর্তমানে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক লস হওয়াটা একটা জাতীয় সমস্যা। কেন ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমে যায় এবং এর থেকে বেচে থাকার জন্য কি কি উপায় ফলো করতে পারি। এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করবো ওয়েবসাইটের ট্রাফিক লস হবার সম্ভাব্য বেশকিছু কারন, এই কারনগুলো আইডেন্টিফাই করে পাশাপাশি কিভাবে এগুলো সল্ভ করবো সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্!
সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদমগুলি আপডেট
এই বিষয়টি আমরা সবাই জানি যে গুগল বিংসহ অনন্যা যতগুলো সার্চ ইঞ্জিন আছে তারা সবাই সবসময় তাদের ব্যবহারকারীদের ধরে রাখার জন্য আইমিন ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পজিটিভ রাখার জন্য প্রতিনিয়ত রিসার্চ চালায়, যার ফলাফলস্বরূপ আমরা গুগলের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের আপডেট আসতে দেখি। (Including Google’s Core Web Vitals, Panda and Penguin)
সার্চ ইঞ্জিনগুলির তাদের অ্যালগরিদমগুলি নিয়মিত আপডেট করা সাধারণ একটা বিষয়। আর অ্যালগরিদম আপডেট করা হলে আপনার ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং পরিবর্তন হতে পারে এটাই স্বাভাবিক। আপডেটের ফলে আপনার রাঙ্ক বুস্টও হতে পারে আবার ডাউনও হতে পারে যার কারনে সাইটের ট্রাফিক হঠাৎ কমে যেতে পারে।
যেমন মনে করুন বর্তমানে আপনার একটি পেইজ গুগলের প্রথম পেইজে আছে, এখন অ্যালগরিদম আপডেটের ফলে যেকোনো কারনে যদি আপনার পোস্টি প্রথম পাইজ থেকে দ্বিতীয় পেইজে চলে যায় তাহলে হুট করেই আপনার সাইটের ট্রাফিক ডাউন করবে। কেননা গবেষণায় বলছে মাত্র ২৫% উজার গুগলের ২য় পেইজে ভিজিট করে থাকে।
টেকনিক্যাল SEO অডিট
যদি আপনার সাইটের ট্রাফিক ডাউন করে তাহলে Screaming Frog বা অন্য কোন SEO টুল দিয়ে অবশ্যই অবশ্যই আপনার সাইটের টেকনিক্যাল SEO অডিট করুন। তাহলে ট্রাফিক ডাউন হবার সম্ভাব্য অনেক কারন সহজেই ধরতে পারবেন।
Use Our Free Tool: Website SEO Checker
Check Domain Name Server DNS
প্রথমে দেখুন যে গুগল তার অ্যালগরিদমের কোনো আপডেট প্রকাশ করেছে কিনা। যদি কোনও বড় গুগল অ্যালগরিদমের আপডেট না থাকে তবে আপনি অবশ্যই আপনার ডোমেইন, DNS (নেম সার্ভার) কাঠামোতে কোনও পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা তা খুজে বের করুন। এর জন্যও আপনাকে টেকনিক্যাল SEO অডিট করতে হবে।
Robots.txt rules ইস্যু
Robots.txt ফাইল কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি। এটা ওয়েবসাইটের জন্য খুবই সেনসিটিভ একটি বিষয়। আপনি আগে এই ব্যাপারে নিশ্চিত কিনা দেখুন আপনার সাইটে robots.txt ফাইল দ্বারা সার্চ ইঞ্জিনকে ক্রল করা থেকে ব্লক করছে না? এমন মনে হলে গুগলে আপনার সাইট ইনডেক্স আছে কিনা তা আগে চেক করুন। তারপরে আপনার robots.txt ফাইলে কোন ভুল থাকলে তা ফিক্স করুন।
XML sitemap চেঞ্জ হয়েছে কিনা
আমরা মোটামুটি এই বিষয়টি জানি যে 200 response status URLs গুলো সাধারণত ভ্যালিড লিংক হয়ে থাকে যা indexable লিংক হিসেবেও পরিচিত। এবং এই ধরণের লিংকগুলো আপনি XML sitemap এ দেখতে পাবেন। কিন্তু কোনকারনে যদি আপনার XML sitemap এর কোন পরিবর্তন হয় তাহলে আপনার লিংকগুলো ইনডেক্স হতে সমস্যা হতে পারে। তাই চেক করে দেখুন আপনার লিংকগুলোর status 200 দেখাচ্ছে কিনা। যদি না দেখায় তাহলে আবার সাইডম্যাপ রি-জেনারেট করে GSC এ সাবমিট করুন।
ওয়েবসাইটের লোডিং Speed ভাল না থাকা
ইউজারদের ওয়েবসাইটে ধরে রাখার জন্য সর্বপ্রথম যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে তা হল Loading speed. ওয়েবসাইটের লোডিং Speed ভাল না থাকলে ভিজিটর সাইট ভিজিট করতে এসে বিরক্ত হয় এবং ২য় বার আর ওই ওয়েবসাইটে ভিজিট করে না। এরফলে বাউঞ্চ রেট বেড়ে যায় যার ফলে রাঙ্ক এ থাকা পোস্ট রাঙ্ক হারায় ভিজিটর হারায়। তাই আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং Speed চেক করে মিনিমাম ৯০+ করার চেষ্টা করুন।
GSC Manual Actions report গুলো চেক করুন
Google Search Console থেকে সকল Manual Actions report গুলো চেক করুন। Google Search Console অনেক নোটিফিকেশন আসে ওইগুলো নিয়মিত চেক করুন।
Google Search Console এ ম্যানুয়াল অ্যাকশনে আসা কিছু নোটিফিকেশনের ধরন দেয়া হল এগুলো Google আপনার সাইটে প্রয়োগ করতে পারে:
- Site abused with third-party spam
- User-generated spam
- Spammy free host
- Structured data issue
- Unnatural links to your site
- Unnatural links from your site
- Thin content with little or no added value
- Cloaking and/or sneaky redirects
- Pure spam
- Cloaked images
- Hidden text and/or keyword stuffing
- AMP content mismatch
- Sneaky mobile redirects
- News and Discover policy violations
আপনার সাইটে যদি সমস্যা সংক্রান্ত কোন ম্যানুয়াল অ্যাকশন আসে, তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমে এই গুলকে ফিক্স করতে হবে। মনে রাখবেন যে অ্যালগরিদম আপনার ওয়েবসাইটের রাঙ্কআউট করবে সেই অ্যালগরিদমগুলই কিন্তু আপনাকে সতর্ক করার জন্য এই ম্যানুয়াল অ্যাকশনগুলো পাঠায়। তাই অ্যালগরিদম আপডেটে হিট খেতে না চাইলে আগে থেকেই ম্যানুয়াল অ্যাকশনগুলকে ফিক্স করে রাখুন নিয়মিত।
ব্যাকলিংক লস্ট হওয়া
আপনার পোস্টের জন্য যে সকল সাইট থেকে লিংক পেয়েছিলেন ওইসকল সাইট গুলো যদি আপনার লিংকটি মুছে দেয় তাহলে ২টি কারন ঘটবে। ১ম- যদি ওইসকল ব্যাকলিংক থেকে আপনার ভিজিটর আসতো তাহলে তা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। ২য়- অনেক সময় আমরা ভাল কলিটির সাইট থেকে আমাদের কোন পোস্টের জন্য ব্যাকলিংক পাবার কারনে পোস্টটি রাঙ্ক এ আসে, তাই হঠাৎ ব্যাকলিংক লস্ট হলে পোস্টিরও রাঙ্ক হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই Ahrefs বা অন্যকোন SEO টুল দিয়ে লাস্ট ৩০ দিনের ডাটা Check করে দেখুন কোন আউটবাউন্ড লিংক লস্ট হয়েছে কিনা। পাশাপাশি আপনার নিজের সাইটের কোন লিংকজুস ভুলে মুছে ফেলেছেন কিনা এটাও Check করে দেখুন।
আপনি কি রিসেন্টলি কোনো পেইজ আপডেট করেছেন?
আপনি যদি রিসেন্টলি কোনো পেইজ বা পোস্ট আপডেট করে থাকেন, তাহলে ওই পোস্টের URL-এ কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখুন। যদি আগের লিংক চেঞ্জ হয়ে যায় তাহলে আগের লিঙ্কগুলিকে নতুন লিঙ্কগুলির সাথে সঠিকভাবে রিডাইরেক্ট করে দিন, এমনটা না করলে আগের লিংকে কেউ ভিজিট করলে 404 চলে আসবে, বাউন্স রেট বেড়ে যাবে, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স খারাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। যার ফলে অভারাল আপনার সাইটের ট্রাফিক ড্রপ করবে।
গুগলের UX এর পরিবর্তন SERP layout changes
মাঝে মাঝেই গুগল তাদের সার্চ Experiment করার জন্য তাদের UX এ অনেক পরিবর্তন experiment করে থাকে। যেমন উদাহরণস্বরূপ যদি গুগলের Featured Snippet রেজাল্টের কথা বলি তাহলে দেখা যায় সেখানে উজার যে প্রয়োজনে সার্চ করেছে ওয়েবসাইটে ভিজিট করা ছড়াই তার প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে মানে সে Snippet রেজাল্টে উত্তর পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলস্রুতিতে আমরা দেখতে পাই CTR দারুনভাবে affected হয়। সোজাভাবে বলা যায় Clickthrough rate একদম কমে যায়। আর এটার জন্য সাইটের ট্রাফিক ডাউন হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আগে চেক করে দেখুন আপনার পোস্টে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা। এটা শুধু যে আপনার পোস্টেই Snippetএ আসতে হবে এমনটা নয়। আপনার Competitor এর পোস্টে Snippetএ থাকলেও একই ঘটনা ঘটবে।
Google Analytics code কাজ করছে কিনা চেক করুন
এটি খুবই তুচ্ছ একটি কারণ যদিও, কিন্তু এটির কারনেও মাঝে মাঝে সাইটের ট্রাফিক শূন্যে নেমে আসে। বিশেষ করে যদি সাইটে যদি Advanced caching অথবা Cloudflare ব্যবহার করা হয় তাহলে এই সমস্যাটি মাঝে মাজে দেখা যায়। যদি হঠাৎ করে আপনার ট্রাফিক শূন্যে নেমে আসে, তাহলে আপনি ধরে নেবেন যে GA কোড আসলে কাজ করছে কিনা। এটি দেখার একটি ভাল উপায় হল আপনার মোবাইল ফোনে আপনার সাইটটি খুলুন এবং তারপরে GA-তে লাইভ ট্রাফিক অপশনে যান তারপরেও আপনি যদি সেখানে আপনার ট্রাফিক শূন্যে দেখতে পান, তাহলে আপনার GA কোড বন্ধ হতে পারে। তাহলে অবশ্যই এটাকে ফিক্স করতে হবে। এটি আপনি GSC ট্র্যাফিক দেখেও বুঝতে পারেন আপনার GA এর কোড ঠিকঠাক কাজ করতেছে কিনা। যদি যদি GSC ট্র্যাফিক দেখায় এবং GA ট্র্যাফিক না দেখায় তাহলে বুঝতে হবে GA কোড ঠিক মত কাজ করতেছেনা এটাকে ফিক্স করতে হবে।
Identify the সোর্স অফ ট্রাফিক
আপনার ওয়েবসাইটে যে ট্রাফিকগুলো আসত তা কোথা থেকে আসত, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নাকি গুগল সার্চ থেকে নাকি অন্য কোন মাধ্যম থেকে। এগুলো আগে খুজে বের করার চেষ্টা করুন। তারপরে ওই নির্দিষ্ট মাধ্যমের সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তা খুঁজুন।
Crawl errors কভারেজ এরর রিপোর্ট
গুগল সার্চ কনসোলে Coverage Report গুলো দেখুন, সেখানে কি কি ইস্যু আছে তা ফিক্স করুন। Coverage Report এ সাধারনত নীচের এই ইস্যুগুলো দেখতে পাবেন।
- Server errors
- Redirect errors
- URLs that are blocked by robots.txt
- URLs that are marked with a noindex tag
- Soft 404 errors
- URLs that return an unauthorised request
- URLs that aren’t able to be located (404s)
- Crawling errors
- Duplicate field
পোস্ট De-indexing হওয়া
বর্তমানে আমরা অনেকেই এই সমস্যা নিয়ে আছি। সাইটের পোস্ট ডি-ইনডেক্স হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে আপনার রাঙ্ক এ থাকা কোন পোস্ট ডি-ইনডেক্স হয়ে গেলেও সাইটে ভিজিটর কমে যেতে পারে। অনেক কারনেই আপনার পোস্ট গুগল ডি-ইনডেক্স করে দিতে পারে। যেমনঃ
- পোস্টের কন্টেন্ট যদি মানসম্মত না হয়
- যদি পোস্টে মাঝে ক্লোকিং করা হয়
- যদি পোস্টে Linking Scheme করা হয়
- পোস্টের মাঝে যদি কোন অপ্রয়োজনীয় হিডেন লিংক থাকে
- ইউজারদেরকে যদি Sneakily Redirect করা হয়
- পোস্টে কীওয়ার্ড ক্যানিবালিজেশন করলে
- মেটা ট্যাগ Noindex, Nofollow সেট করা হলে
- Duplicate Content ব্যাবহার করা বা Ai দিয়ে লিখা নিম্নমানের পোস্ট
- XML সাইটম্যাপ ব্যবহার না করা, Linking to Dead Links or PBN, Over-Optimization, outdated seo practices করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমন সমস্যায় পড়লে সমস্যাটি প্রথমে আইডেন্টিফাই করতে হবে তারপরে ঐটার সমাধান করে নতুন করে XML সাইটম্যাপ সার্চ কনসোলে আপডেট করুন।
Seasonal নিস নিয়ে কাজ করা
কিছু কিছু বিষয় আছে যা কেবল মাত্র বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় মানুষের প্রয়োজন হয়। এবং ওই নির্দিষ্ট সময়েই ভাল ট্র্যাফিক পাওয়া যায়। যেমন মনে করুন ছাতা। এখন বর্ষাকালে স্বাভাবিকভাবেই ছাতার চাহিদা বেশী থাকবে এবং তখন ছাতা বিক্রিও বেশী হবে। আবার কম্বল শুধু মানুষ শীতের জন্যই কিনবে গরমের দিনে কেউ কম্বল গাঁয় দিবেনা। তাই দেখবেন স্বাভাবিকভাবেই শীতের সিজন আসলে কম্বল বিক্রি করা হয় অন্য সময় এইগুলো গুদামে ফেলে রাখা হয়। ছাতা কম্বল যেমন একটা নির্দিষ্ট সিজনে চলে তেমনি কিছু কিছু নিস আছে যেগুলো কিছু কিছু সময়য়ে ভাল ফলাফল দেয়। তাই আপনাকে খুঁজে দেখতে হবে আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু সিজনাল কিনা। তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন ভিজিটর কমে গেছে।
ইউজার ফ্রেন্ডলি বা Mobile-friendly সাইট না হওয়া
আমাদের ভিজিটরদের আলমোস্ট ৯০% ভিজিটরেই মোবাইল থেকে ভিজিট করে। তাই আপনার ওয়েবসাইট মোবাইল ফ্রেন্ডলি রাখাটা অনেক বেশী জরুলি বলতে পারেন বাধ্যতামূলকও বটে। তাই আগে এই লিংকে গিয়ে https://search.google.com/test/mobile-friendly চেক করে দেখুন আপনার সাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি কিনা। মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হলে তা অপটিমাইজ করে ফিক্স করুন।
পরিশেষ কিছু কথাঃ এই সমস্যাগুলোর অনেকগুলই হয়তো অনেকে জানেন আবার অনেকগুলো অনেকে জানেন না। মূলত seo এমন একটা মন্ত্র যা আয়ত করার কোন শেষ সীমানা নেই। যদি কেউ বলে আছে তাহলে ১০০% নিশ্চিতভাবে ধরে নিবেন সে মিথ্যা বলছে।
আমি মোঃ রাশেদ মিয়া। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট নিয়ে কাজ করছি। আমার ইউটিউবে কিছু সাবস্ক্রাইবার হলে ইনশাআল্লাহ্ seo এর আর অনেক প্রো টিপস শেয়ার করবো সেখানে। তাই চাইলে যুক্ত থাকতে পারেন।