Site icon Marketer Rashed

রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ

রমজান মাসের দোয়া

রমজান মাসের দোয়া

রমজান মাসের দোয়া- রজব মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ-

রমজান মাসের আমল সমূহ- রমজান মাস আসার আগে দোয়া- রমজান মাসের কোরআন তেলাওয়াত-

রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ, হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বছরে ১২টি মাস। এরমধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক; আর তা হচ্ছে- জিলক্বদ, জিলহজ ও মহররম। আর চতুর্থ মাসটি হল- রজব, যা জমাদিউল উখরা ও শাবান মাসের মর্ধবর্তী মাস।’ (বুখারি)

পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তার জানান দেয় রজব ও শাবান মাস। এ কারণেই রমজানের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান জুড়ে ইবাদত ও রোজা রেখে প্রস্তুতি নিতেন। আর বেশি বেশি একটি দোয়া পড়তেন। যাতে মুসলিম উম্মাহও তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ করে।

আর তা হলো-

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।’

যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।

আরো পড়ুন,

রমজানের সময় সূচি 2022

রোজা কবে থেকে শুরু হবে?

রমজানের প্রস্তুতি

রমজানের মাসআলা সমূহ

রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাস জুড়ে তাসবিহ, ইসতেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করা ছিল উম্মতের জন্য বিশেষ নসিহত। যাতে মানুষ এ বিশেষ তাসবিহ, ইসতেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে নিজেকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে পারেন।

রমজানে যে বিশেষ দোয়া পড়বেন

হাদিসে এসেছে-

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন যে, ‘হে লোক সকল! অবশ্যই তোমাদের সামনে মহান মাস, বরকতময় মাস উপস্থিত। এ মাসে তোমরা ৪টি কাজ বেশি বেশি আদায় কর। এর মধ্যে দু’টি কাজ আল্লাহর জন্য আর দু’টি কাজ তোমাদের নিজেদের জন্য।

আল্লাহ জন্য ২ কাজ হলো (তাসবিহ) এ সাক্ষ্য দেয়া যে, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

আর নিজের জন্য যে দুই কাজ করতে বলেছেন, তাহলো- জান্নাত লাভের দোয়া করা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া।’

হাদিসে ঘোষিত বিশেষ দোয়া

তাসবিহ পড়া অর্থাৎ এ সাক্ষ্য দেয়া-

– لَا اِلَهَ اِلَّا الله

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

ইসতেগফার করা অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া। হাদিসে অনেক ইসতেগফার এসেছে। এর যে কোনোটি পড়লেই হবে-

– اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اِنَّ اللهَ غَفُوْرُ الرَّحِيْم

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।

অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

– اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اّللَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি এক ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমরা ফিরে যাবো।’

– رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব্ আলাইয়্যা ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।’

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তাওবাকবুলকারী, দয়াবান।’

– اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার ওপর তোমার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতিত কোনো ক্ষমাকারী নেই।’

রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো রমজান মাস জুড়ে বেশি বেশি তাওহিদের ঘোষণা, ইসতেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা, জান্নাতের আশা ও জাহান্নাম থেকে নাজাতের দোয়া করার কথা বলেছেন।

আল্লাহ তাআলা রমজানজুড়ে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী উল্লেখিত তাসবিহ, ইসতেগফার ও দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

রমজান পর্যন্ত দোয়াটি বেশি বেশি পড়ুন

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ –আল মুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯

সুতরাং এখন থেকে রমজান পর্যন্ত দোয়াটি খুব বেশি বেশি পড়া দরকার। আলেমরা বলেছেন, ‘আশহুরে হুরুমের বৈশিষ্ট্য হলো, এসব মাসে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তওফিক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গোনাহ পরিহার করা সহজ হয়।’ –আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ৩/১১১

রজব মাসের দোয়া- রমজান মাসের দোয়া এবং আমল সমূহ

বর্ণিত দোয়া ছাড়াও এ মাসে এই আমলগুলো করা যেতে পারে।

রজবের প্রথম রাতের দোয়া কবুল হয়-

পবিত্র হাদিস শরিফে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো- জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯২৭

রজব মাসের রোজা-

রজব মাসে রোজা রাখার ভিন্ন কোনো ফজিলত নেই। তবে হ্যাঁ, এমনিতেই নফল রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। মুহাদ্দিস হাকেম ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, বিশেষভাবে রজব মাসে রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ ও আমলযোগ্য কোনো হাদিস নেই। -তাবইনুল আজার বিমা ওরাদা ফি ফজলি রজব: ১১

ইসলামি শরিয়তে রোজা রাখার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া যেকোনো দিনই নফল রোজা রাখা যায়। এর অনেক ফজিলত রয়েছে। তবে রজবের বিশেষ রোজা হিসেবে ফজিলতপূর্ণ মনে করে রোজা রাখা সুন্নত নয়। বিশেষত, রজবের রোজাকে সুন্নত ও মুস্তাহাব মনে করে নফল রোজা রাখা ঠিক নয়।

সমাজের প্রচলন আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফজিলত। এমনকি অনেকের মধ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে এই একটি রোজার ফজিলত এক হাজার রোজার সমান। এ জন্য তাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই।

রজব মাসে খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর মাজারে তার ওফাত উপলক্ষে যে ‘উরস’ হয় সেখানে এমন অনেক পশু জবাই করা হয় যা মূর্খ লোকেরা হজরত খাজা (রহ.) বা তার মাজারের নামে মান্নত করে থাকে। এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারও নামে মান্নত করা, তা যদি পীর-বুজুর্গের নামেও হয়- তবুও তা শিরক।

আজমিরের ওরসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে লাল কাপড়ে মোড়ানো বিরাট ‘আজমিরি ডেগ’, ‘খাজার ডেগ’ আবার কোথাও কোথাও মাজারের আদলে অস্থায়ী মাজার স্থাপন করা হয়। পরে আজমির এর উদ্দেশ্যে মান্নত কিংবা প্রয়োজন পূরণের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, চাল-ডাল ইত্যাদি ওঠানো হয়। যা দেওয়াও হারাম এবং ওখান থেকে কিছু খাওয়াও হারাম। যারা এগুলো উঠায় তারা এগুলো দিয়ে আনন্দ-ফূর্তির আয়োজন করে। ঢোল-তবলা ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নাচ-গানের আসর বসায়, নাচ-গানসহ নানা ধরনের গর্হিত কাজ করে, যা নিঃসন্দেহে হারাম।

রমজান মাসের বিশেষ দোয়া

হজরত সালমান (রা.) বলেন, একবার নবী করিম (সা.) শাবান মাসের শেষদিন ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ খুব বেশি করে করবে।

দু’টি কাজ দ্বারা তোমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। আর দু’টি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই। যে দু’টি কাজ দ্বারা তোমরা প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে তা হলো- তোমরা আল্লাহর একত্ববাদের স্বাক্ষ্য দিতে থাকবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। যে দু’টি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই তা হলো- তোমরা জান্নাত প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে। -সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৮৮৭

এই হাদিসের ভিত্তিতে উপরোক্ত দোয়ার চারটি বাক্য-

أشهد أن لا إله إلا الله

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

অর্থ : আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই।

أستغفر الله

উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহ

অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাই।

أسألك الجنة

উচ্চারণ : আসআলুকাল জান্নাহ্।

অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই।

أعوذ بك من النار

উচ্চারণ : আউজু বিকা মিনান নার।

অর্থ : আমি তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।

এই দোয়ার বাক্যগুলো মিলিয়ে একত্রে পড়া যাবে, ইচ্ছে করলে আলাদা আলাদাও পড়া যাবে।

তথ্য সংগ্রহ এবং কৃতজ্ঞতায়:

আরো পড়ুন:

Exit mobile version